
পাকিস্তানে ফের এক মর্মান্তিক নারী হত্যাকাণ্ডে আলোড়ন উঠেছে। মাত্র ১৭ বছর বয়সী টিকটক তারকা সানা ইউসুফকে ইসলামাবাদে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, যাকে প্রেম প্রত্যাখ্যানজনিত সহিংসতার নতুন উদাহরণ হিসেবে দেখছে দেশটির মানবাধিকার সংস্থাগুলো।
পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যায় ইসলামাবাদে নিজ বাড়িতে সানা ইউসুফকে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টিকটকে ৮ লাখের বেশি অনুসারী ছিল, যেখানে তিনি মূলত লিপ-সিঙ্ক ভিডিও, স্কিন কেয়ার টিপস ও সৌন্দর্য পণ্যের প্রচারণামূলক কনটেন্ট পোস্ট করতেন।
ইসলামাবাদ পুলিশের প্রধান সৈয়দ আলি নাসির রিজভি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “এটি ছিল একাধিকবার প্রত্যাখ্যাত হওয়ার একটি ঘটনা। অভিযুক্ত যুবক বারবার সানার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছিল, কিন্তু ব্যর্থ হওয়ায় সে প্রতিহিংসার পথ বেছে নেয়। এটি একটি নিষ্ঠুর ও ঠান্ডা মাথায় পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।”
পুলিশ ২২ বছর বয়সী এক যুবককে এ হত্যাকাণ্ডে সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে। প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তি সানার বাসার সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকত এবং সামাজিক মাধ্যমে তাকে হয়রানি করত।
সানা ইউসুফ গত সপ্তাহেই ১৭ বছরে পা দিয়েছিলেন। হত্যার কয়েক ঘণ্টা আগেই তিনি নিজের টিকটক অ্যাকাউন্টে একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন, যেখানে তাকে জন্মদিনের কেক কাটতে দেখা যায়। ভিডিওর নিচে ইতিমধ্যেই হাজারো অনুসারী মন্তব্য করেছেন — “Rest in Peace”, “Justice for Sana”, এবং “She didn’t deserve this”.
এই ঘটনার পর পাকিস্তানে আবারও নারীর নিরাপত্তা ও অনলাইন হয়রানি নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে। পাকিস্তান মানবাধিকার কমিশন জানিয়েছে, “বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় নারীদের ওপর সহিংসতার ঘটনা পাকিস্তানে দুঃখজনকভাবে খুবই সাধারণ।”
এমন ঘটনা নতুন নয়। ২০২১ সালে আলোচিত আরেকটি হত্যাকাণ্ডে, ২৭ বছর বয়সী নূর মুকাদ্দামকে তার সাবেক প্রেমিক নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। সেই মামলায় ঘাতক জাহির জাফরকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। ২০১৬ সালে, খাদিজা সিদ্দিকি নামের এক তরুণী ২৩ বার ছুরিকাঘাতের শিকার হয়ে প্রাণে বেঁচে যান — হামলাকারী ছিলেন তারই সাবেক প্রেমিক।
সানা ইউসুফের মৃত্যুর ঘটনাটি শুধু পাকিস্তানেই নয়, আন্তর্জাতিক পর্যায়েও নড়েচড়ে বসিয়েছে মানুষকে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে সানার ভক্তরা বিচার ও নারীদের সুরক্ষার দাবিতে সোচ্চার হচ্ছেন।
সানার পরিবারের পক্ষ থেকে এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য আসেনি, তবে তারা জানিয়েছেন, দ্রুত বিচার চান তারা। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন চলছে #JusticeForSana আন্দোলন, যা দেশজুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিরোধের নতুন বার্তা দিচ্ছে।