
গাজার পুরো পরিবার হারানো দুই ফিলিস্তিনি বাসিন্দা ‘পৃথিবী যেন ভুলেই গেছে গাজার নিঃসঙ্গ সংগ্রাম,ভয়,লাঞ্ছনায় ও চিকিৎসাহীনতায় দিন কাটছে আসীল ও আফাফের—যুদ্ধ তাদের করে তুলেছে আরও অসহায়
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়- শাতি শরণার্থী শিবির, গাজা – গাজা উপত্যকার সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাগুলোর একটিতে, শাতি শরণার্থী শিবিরের একটি গুমোট তাঁবুতে, ৩০ বছর বয়সী রানিম আবু আল-আইশ দিন কাটাচ্ছেন তাঁর দুই প্রতিবন্ধী বোন আসীল (৫১) ও আফাফ (৩৩)-এর দেখাশোনা করে।
রানিম বলেন, “ওরা ঠিকমতো বুঝিয়ে বলতে পারে না কী চায়, কেমন বোধ করছে। পরিবেশে একটু চাপ এলেই ওরা ভেঙে পড়ে।”দুই বোনের আচরণ কখনো টুরেট সিনড্রোমের মতো মনে হয়—হঠাৎ চিৎকার, অস্বাভাবিক অঙ্গচালনা, আবেগপ্রবণ প্রতিক্রিয়া।
‘ওদের দেখে লোকে হাসে, অথচ ওরা কাঁদে’
রানিম ও তার পরিবারের মোট সাতজন সদস্য এই অস্থায়ী তাঁবুতে বাস করছেন—প্রতিবন্ধী দুই বোন, অসুস্থ মা-বাবা, আরেক বোন ও তার স্বামী। তাঁবুটি প্রচণ্ড গরম ও কনকনে ঠান্ডার মধ্য দিয়ে দিন-রাত পার করে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা বলতে কিছু নেই।
রানিম বলেন, “যখন ওদের কাপড় পাল্টাতে হয়, তখন অন্যদের বাইরে পাঠাতে চাই। কিন্তু সবসময় সম্ভব হয় না।”
শারীরিক কষ্টের চেয়ে সমাজের উপহাস ও লাঞ্ছনাই দুই বোনের জন্য বেশি যন্ত্রণাদায়ক।
“মানুষ ভাবে ওরা ঠিক আছে। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। ওরা ধৈর্য, সহানুভূতি আর সম্মান চায়,” রানিম বলেন।
আসীল শব্দ বা পরিবেশের পরিবর্তনে প্রচণ্ড চিৎকার ও কান্নায় ভেঙে পড়ে। আফাফের অঙ্গচালনা ও আচরণ অনিচ্ছাকৃত—একটু উচ্চস্বরে কথা বা বাকবিতণ্ডা হলে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে।
শিশুরা প্রায়ই তাকে উপহাস করে। “বাথরুমে গেলে মানুষ খারাপ কথা বলে, হাসাহাসি করে। এটা ওদের খুব আঘাত করে,” রানিম বলেন।
মোহাম্মদকে ধরে নিয়ে গিয়ে ‘রক্ষাকর্তা’ ছিনিয়ে নিয়েছে ইসরায়েল
২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর পরিবারের বড় ভাই মোহাম্মদকে কামাল আদওয়ান হাসপাতাল থেকে তুলে নিয়ে যায় ইসরায়েলি বাহিনী।
“ও-ই ছিল আমাদের সবকিছু। ওষুধ আনত, হাসপাতালে নিয়ে যেত, ত্রাণ সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করত,” রানিম বলেন। “মোহাম্মদ না থাকায় আমরা এখন পুরোপুরি একা।”
বাস্তুচ্যুতি, খাদ্য ও ওষুধের সংকট
গাজার ৪ লাখ ৩৬ হাজারের বেশি মানুষ নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যে। রানিমের পরিবার আগে জাবালিয়ার ব্লক-২-এ থাকতেন, কিন্তু বোমাবর্ষণে ঘর ধ্বংস হয়। এরপর ঘুরে বেড়িয়েছেন আত্মীয়ের বাড়ি, আশ্রয়কেন্দ্র, জাতিসংঘের স্কুল, আর এখন তাঁবুতে।
আসীল ও আফাফের সিলিয়াক রোগের জন্য গ্লুটেন-মুক্ত খাবার প্রয়োজন, কিন্তু গাজার প্রধান খাদ্যই গ্লুটেনযুক্ত গমের রুটি।
“সবজি নেই, মাংস নেই। মোহাম্মদ থাকলে কিছু একটা জোগাড় করত। এখন পারি না,” রানিম বলেন।
‘প্রতিবার নতুন জায়গায় গিয়ে সহানুভূতির ভিক্ষা করতে হয়’
যুদ্ধ শুরুর আগে কামাল আদওয়ান হাসপাতালে নিয়মিত চিকিৎসা পেত আসীল ও আফাফ। এখন সব বন্ধ।
রানিম প্রতিবেশীদের বোঝাতে চেষ্টা করেছেন, সম্প্রদায়ের বয়োজ্যেষ্ঠদের দ্বারস্থ হয়েছেন, তবুও সমবেদনা দুর্লভ।
“মানুষ শুধু দেখে, ব্যঙ্গ করে। আমরা শুধু চাই—একটু বোঝার চেষ্টা করুক।”
ওরা শুধু যুদ্ধের শিকার নয়”একটি তাঁবু, অনাহার, যুদ্ধের আতঙ্ক, প্রতিবন্ধকতা—সবকিছুর মধ্যেই বেঁচে থাকার সংগ্রাম করে যাচ্ছে আসীল ও আফাফ।
রানিম বলেন, “ওরা শুধু যুদ্ধের শিকার নয়,গাজায় যুদ্ধ শুধুই ফিলিস্তিনিদের জীবন কেড়ে নেয়নি-বিশ্ব নেতাদের মনুষ্যত্ব কেড়ে নিয়েছে