
রাশিয়ার পারমাণবিক বোমারু বিমান ঘাঁটিতে ইউক্রেনের আকস্মিক ড্রোন হামলা রীতিমতো ইতিহাস গড়েছে—এমনটাই দাবি করছেন একাধিক সামরিক বিশ্লেষক। কিছু রুশ সামরিক বিশ্লেষক এই হামলাকে ১৯৪১ সালে জাপানের পার্ল হারবার আক্রমণের চেয়েও কৌশলগতভাবে বিস্ময়কর ও সাহসী অভিযানে পরিণত হয়েছে বলে অভিহিত করেছেন।
এই প্রথমবারের মতো ইউক্রেনীয় ড্রোন সাইবেরিয়ার মতো রাশিয়ার গভীর ভূখণ্ডে ঢুকে একযোগে অন্তত চারটি বোমারু বিমান ঘাঁটিতে আঘাত হেনেছে। কিয়েভ দাবি করেছে, এতে প্রায় ৪০টি বোমারু বিমান ধ্বংস বা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে—যা রাশিয়ার কৌশলগত বোমারু বহরের এক-তৃতীয়াংশ। যদিও মস্কো সীমিত ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করেছে, ভিডিও ও স্যাটেলাইট চিত্রে কয়েকটি ধ্বংসপ্রাপ্ত Tu-95 এবং Tu-22M বিমান দেখা গেছে।
এই আঘাত শুধু রাশিয়ার সামরিক সম্পদের ওপর নয়, বরং তাদের আত্মবিশ্বাস ও প্রতিরক্ষা কৌশলের ওপরও বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে।
পারমাণবিক অস্ত্রবাহী বোমারু বহর লক্ষবস্তু
রাশিয়ার কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্রত্রয়ের অংশ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বোমারু বিমান ব্যবহৃত হয়ে আসছে। তিনটি শ্রেণির এসব বিমান হামলার লক্ষ্যবস্তু ছিল:
Tu-95 “Bear”: সোভিয়েত আমলের টার্বোপ্রপ বোমারু, ৮টি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহনে সক্ষম।
Tu-22M “Backfire”: সুপারসনিক, Kh-22 ক্ষেপণাস্ত্র বহনকারী, যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম।
Tu-160 “Blackjack”: রাশিয়ার সবচেয়ে উন্নত সুপারসনিক বোমারু, সীমিত সংখ্যক।
এই বিমানের ক্ষতি সহজে পূরণ করার মতো রাশিয়ার সক্ষমতা নেই, কারণ এদের উৎপাদন বহু আগেই বন্ধ হয়েছে। এ নিয়ে রুশ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক ডগলাস ব্যারি সতর্ক করে বলেছেন, এই হামলা রাশিয়াকে তার ভবিষ্যৎ কৌশলগত বিমান প্রকল্পে জোর দিতে বাধ্য করতে পারে।
রাডার ও গোয়েন্দা সক্ষমতায় আঘাত
ইউক্রেন দাবি করেছে, তারা একটি A-50 রাডার ও কন্ট্রোল বিমানও আঘাত করেছে, যা মার্কিন AWACS বিমানের মতো কাজ করে। এর ক্ষতি রাশিয়ার বায়ু গোয়েন্দা ও নির্দেশনার পক্ষে বড় ধাক্কা।
আক্রমণের প্রধান স্থানগুলো:
ওলেনিয়া ঘাঁটি, কোলা উপদ্বীপ: Tu-95 বিমানের মূল ঘাঁটি, উপগ্রহ চিত্রে ব্যাপক ধ্বংসের প্রমাণ।
বেলায়া ঘাঁটি, সাইবেরিয়া: Tu-22M বিমানের অবস্থান, এখানে বড় ক্ষতির দাবি।
মুরমানস্ক ও ফার ইস্ট: হামলার চেষ্টা হলেও রুশ দাবি অনুযায়ী প্রতিহত করা হয়েছে।
ইউক্রেনীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অভিযান ১৮ মাস ধরে পরিকল্পিত। বাণিজ্যিক ট্রাকে লুকিয়ে চারটি ঘাঁটিতে ড্রোন বহর পাঠানো হয়েছে, যা একযোগে হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথকে হামলার ব্যাপারে অবহিত করা হয়েছে। এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “এটি এমন একটি কৌশলগত উন্নয়ন যা আমরা এর আগে কখনো দেখিনি।”
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় দাবিকৃত ক্ষতির অনেকটাই অস্বীকার করেছে। কিন্তু রুশ সামরিক ব্লগাররা বিস্ফোরক ভাষায় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তাঁরা বলেন, বিশাল আকারের এসব বোমারু বিমানের জন্য সুরক্ষিত হ্যাঙ্গার তৈরি না করে যেসব সাময়িক প্রতিরক্ষা নেওয়া হয়েছে, তা ছিল “ভাওতাবাজি”।
একাধিক স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে, Tu-95 বিমানের ওপর পুরনো টায়ার চাপিয়ে ঢেকে রাখার প্রচেষ্টা—যা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিদ্রুপের শিকার হয়েছে।
এই হামলা প্রমাণ করে যে ইউক্রেন শুধু রণক্ষেত্রে নয়, কৌশলগত পর্যায়েও রাশিয়ার প্রতিরক্ষা বলয় ভেদ করতে সক্ষম