
দক্ষিণ কোরিয়ায় দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সামরিক শাসনের ছায়া পেরিয়ে অবশেষে অনুষ্ঠিত হলো বহুল প্রত্যাশিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। এক্সিট পোলের ফলাফল অনুযায়ী, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী ও সাবেক মানবাধিকার আইনজীবী লি জে-মিয়াং প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়লাভ করতে যাচ্ছেন।
দেশটির প্রধান তিনটি সম্প্রচার সংস্থার যৌথ জরিপ বলছে, লি পেয়েছেন প্রায় ৫১.৭% ভোট, যা তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী রক্ষণশীল প্রার্থী কিম মুন-সু-এর ৩৯.৩% ভোটের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।
এই নির্বাচন আয়োজন করা হয় সাবেক প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়ল-এর সামরিক শাসন জারির সিদ্ধান্ত ও পরে অভিশংসনের প্রেক্ষাপটে, যা দক্ষিণ কোরিয়াকে এক গভীর রাজনৈতিক সংকটে ফেলেছিল। যদিও সামরিক শাসনের আদেশ মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে বাতিল করা হয়, ততক্ষণে তা দেশব্যাপী গণবিক্ষোভ এবং অসন্তোষের জন্ম দেয়।
লি এই নির্বাচনকে বর্ণনা করেছেন “এশিয়ার চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির জন্য বিচার দিবস” হিসেবে। ভোটার উপস্থিতিও ছিল উল্লেখযোগ্য — সন্ধ্যা ৮টা নাগাদ ৭৭.৮%, যা আগের নির্বাচনের তুলনায় বেশি।
৬১ বছর বয়সী লি অতীতে দুবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে পরাজিত হন, তবে এবার জনগণের ক্ষোভ এবং পরিবর্তনের আশাকে পুঁজি করে তিনি এগিয়ে যান।
লি বলেন, “এই নির্বাচন ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত প্রতিষ্ঠানের কবলে থাকা দক্ষিণ কোরিয়াকে রক্ষা করার শেষ সুযোগ।”
বিরোধী শিবিরে দ্বন্দ্ব ও আশঙ্কা
অন্যদিকে কিম মুন-সু ইউন সুক ইয়লের প্রশাসনের সাবেক শ্রমমন্ত্রী। তিনি লি-কে একনায়কতন্ত্রের পথ বেছে নেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেন এবং বলেন, “লি যদি জয়ী হন, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়ার গণতন্ত্র বিপন্ন হবে।”
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, কিম নিজেই মধ্যপন্থী ভোটারদের আকৃষ্ট করতে ব্যর্থ হন এবং ইউন-এর উত্তরাধিকারের প্রশ্নে তাঁর দল অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে।
আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ
প্রেসিডেন্ট হিসেবে লি জে-মিয়াং-এর সামনে এখন বিশাল চ্যালেঞ্জ।
অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার,
আয় বৈষম্য দূরীকরণ,
জাতীয় বিভক্তি নিরসন,
এবং উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক হুমকি মোকাবিলা—এই চারটি বিষয় থাকবে তাঁর অগ্রাধিকারে।
তিনি সাম্প্রতিক বক্তব্যে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের সঙ্গে কৌশলগত মিত্রতা বজায় রাখার অঙ্গীকার করেন, যদিও উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে নতুন করে সংলাপ শুরু করার ব্যাপারে সতর্কতা প্রকাশ করেন।
লি বলেন, “আমি চাই কোরিয়া আবার একত্রিত হোক। আমরা চাই উন্নয়ন, সমতা ও গণতন্ত্র।”
আগামীকাল বুধবার থেকেই লি আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। এবার কোনো ঐতিহ্যগত ক্ষমতা হস্তান্তরের সময়সীমা থাকছে না।