ঢাকাশনিবার , ১৫ মার্চ ২০২৫
  1. Global News
  2. অপরাধ
  3. অভিযোগ
  4. অর্থনীতি
  5. আইন-বিচার
  6. আটক
  7. আন্তর্জাতিক
  8. আবহাওয়া
  9. কৃষি-সংবাদ
  10. খেলা-ধুলা
  11. জাতীয়
  12. জীবনযাত্রা
  13. ধর্ম
  14. প্রবাস প্রযুক্তি
  15. ফিচার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

রেজুলেশন করে ঘুষকে বৈধতা দিল শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি

নিজস্ব প্রতিবেদক
মার্চ ১৫, ২০২৫ ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ
Link Copied!

সভা ডেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রেজুলেশন করে ঘুষ দেওয়াকে বৈধতার স্বীকৃতি দিয়েছে শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি। ঘুষের পরিমান নির্ধারণ করা সংক্রান্ত সভার রেজুলেশনের অংশ বিশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে এ নিয়ে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

তবে ঘুষের পরিমান সহনীয় পর্যায় নামিয়ে আনা এবং  হয়রানি থেকে রক্ষা পেতে সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম কাশেম। আর এই সিদ্ধান্তকে নজিরবিহীন আখ্যা দিয়ে বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং খাটো করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন।

গত ৬ মার্চ  শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত ভাইরাল হওয়া রেজুলেশনে দেখা যায়, শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাহী সভা গত ৬ মার্চ দুপুর ২টায় শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি ভবনে আলহাজ্ব অ্যাড. সুলতান হোসেন মিয়া সভাকক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচিত নির্বাহী কমিটির সভাপতি অ্যাড. জাহাঙ্গীর আলম কাশেম এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মুহাম্মদ কামরুল হাসান।

সভার শুরুতে এজেন্ডা ভিত্তিক আলোচনায় সকল সদস্য অংশগ্রহন করেন এবং নিম্ন বর্ণিত সিদ্ধান্তসমূহ সর্ব-সম্মতিক্রমে গৃহিত হয়।

সিদ্ধান্ত নং-২: পেশকার/পিয়নকে সি, আর ফাইলিংএ ১০০ টাকার বেশী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নং-৩: যেকোন দরখাস্তে জি, আর/সি,আর ১০০ টাকার বেশী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নং- ৪: জামিননামা দাখিলের খরচ মামলা প্রতি ১০০ টাকার নীচে না এবং ২০০ টাকার বেশী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

সিদ্ধান্ত নং-৫: গারদখানায় ওকালতনামায় স্বাক্ষরে ১০০ টাকা, সিভিল ফাইলিং এ সর্বোচ্চ ২০০ টাকা ও হলফনামায় ১০০ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।

আর কোন আলোচনা না থাকায় সবাইকে ধন্যবাদ দিয়ে সভাপতি সভার কার্যক্রম সমাপ্ত ঘোষণা করেন।

এই রেজুলেশনের অংশ বিশেষ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে।

সাধারণ মানুষ এটাকে ঘুষকে অফিসিয়ালি বৈধতা দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেন। অথচ এই ঘুষ দেওয়া-নেওয়ার কোন নিয়ম নেই।

এ বিষয়ে বৈসম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শরীয়তপুর জেলা শাখার আহবায়ক ইমরান আল নাজির তার ফেসবুকে শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভায় পাশ হওয়া রেজুলেশনের অংশ বিশেষ পোস্ট করে সেখানে লিখেন, “ঘুষের সার্টিফিকেট দিলো শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতি।”

পলাশ খান নামে একজন সভায় পাশ হওয়া রেজুলেশনের অংশ বিশেষ ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেন, “এখন আদালতে প্রকাশ্যে ঘুষ লেনদেন হবে বাহ্।”

শাহিন আলম নামে এক ফেসবুক ব্যবহারকারী তার আইডিতে শরীয়তপুর আইনজীবী সমিতির সভায় পাশ হওয়া ওই রেজুলেশনের অংশ বিশেষ পোস্ট করে লিখেন, “অনিয়ম যখন দীর্ঘদিন ধরে চলে, তখন সেটা আইন হয়ে যায়। সেটার প্রমাণ এই মিটিংয়ে নেয়া সিদ্ধান্তগুলো। আমাদের সমাজ আজ কোথায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে?

এ বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি গ্লোবাল ন্যাশনকে বলেন, শরীয়তপুর কোর্টকাচারিতে দীর্ঘদিন যাবৎ ঘুষ নেওয়ার রেওয়াজ চলে আসছে। কোর্টের কর্মচারীরা ইচ্ছেমতো যার থেকে যা পারছে আদায় করে নিচ্ছে। আমরা চাচ্ছি এটা বন্ধ হোক। যেহেতু এটা একবারে হুট করে বন্ধ করা যাবেনা তাই সভায় ঘুষের পরিমান সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে নির্দিষ্ট আকারে দেওয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। যাতে আমরা কেউ হয়রানির শিকার না হই।  ভবিষ্যতে আমরা এই অনৈতিক লেনদেন পুরোপুরি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেব।

এ বিষয়ে শরীয়তপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নাজির শেখ মহসিন স্বপন গ্লোবাল ন্যাশনকে বলেন, আইনজীবী সমিতি সভা ডেকে ঘুষের পরিমান নির্ধারণ করে এ ধরনের রেজুলেশন ভাইরাল করায় আমরা বিস্মিত হয়েছি। এটা নজিরবিহীন। ঘুষকে রেজুলেশন আকারে বৈধতা দেওয়া হয় এটা কোন ইতিহাসে নাই। এটা করে তারা বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ এবং খাটো করেছে। তারা এই কাজটা ঠিক করে নাই। তাদেরকেই জিজ্ঞাসা করেন, তারা এই কাজটা কেন করলেন। ৫ আগস্টের পরে এ ধরনের লেনদেন টোটালি বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের জজ স্যার, চিফ স্যার এ ব্যাপারে সোচ্চার রয়েছেন। কোন ফাইল বা কোন কাজ আটকে থাকছেনা। সকল কাজ যথা সময়ে হয়ে যাচ্ছে। তাহলে কেন আমাদের স্টাফদের ঘুষের আওতায় আনা হলো আমি জানতে চাই।

উল্লেখ্য, গত ১২ ফেব্রুয়ারী শরীয়তপুর জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে জাতীতাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্যানেল ১৫টি পদের মধ্যে ১৫টি পদেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হন।

বিএনপির নেতা-কর্মীদের বাধার মুখে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি বলে অভিযোগ রয়েছে।

মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন গত ১২ ফেব্রুয়ারী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১৫টি পদে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী ছাড়া অন্য কোনো প্রার্থী মনোনয়নপত্র দাখিল না করায় তাঁদের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। এতে জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম সভাপতি ও জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক কামরুল হাসান সাধারণ সম্পাদক হন।

শরীয়তপুর কোর্ট পরিদর্শক শিমুল সরকার গ্লোবাল ন্যাশনকে বলেন, আমি জানতে পেরছি আইনজীবী সমিতি মিটিং করে ঘুষের রেট নির্ধারণ করেছে, এটা তাদের বিষয়। তারা এ বিষয়ে আমাকে এখনও কিছু জানায়নি। আমাদের এখানে ঘুষ নেওয়ার সাথে কেউ জড়িত আছে কি-না আমার জানা নেই। এ রকম যদি কেউ নিয়ে থাকে তাহলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন, শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি অ্যাড মাসুদুর রহমান বলেন, এ ভাবে সভা ডেকে রেজুলেশন করে ঘুষের পরিমান নির্ধারণ করা বেআইনি। আমি এটা কখনোই সমর্থন করিনা। আমি এর নিন্দা জানাই।

In addition to creating news on this site, we collect news from various news sites and publish it with relevant sources. Therefore, if you have any objections or complaints about any news, you are requested to contact the authorities of the relevant news site. It is illegal to use news, photographs, audio and video from this site without permission.