
উত্তর সিরিয়ার কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ তিশরিন বাঁধে সরকারি নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন করেছে সিরিয়ার নতুন সরকার। দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা (SANA) শনিবার জানায়, “সিরিয়ান আরব আর্মি এবং নিরাপত্তা বাহিনী তিশরিন বাঁধে প্রবেশ করেছে … সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এবং এসডিএফ-এর (SDF) সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তির আওতায় এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
এই চুক্তির আওতায় কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্স (SDF) তাদের বাহিনী বাঁধ এলাকা থেকে প্রত্যাহার করবে। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০১৫ সালে দায়েশ (আইএস)-এর কাছ থেকে বাঁধটি দখলে নেয় এসডিএফ।
তিশরিন বাঁধ সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশের মানবিজ শহরের নিকটে অবস্থিত এবং এটি ইউফ্রেটিস নদীর ওপর একটি গুরুত্বপূর্ণ জলবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও কৃষিকাজে ব্যবহৃত সেচের প্রধান উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
এক কুর্দি সূত্র জানায়, যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন জঙ্গি বিরোধী জোটের তত্ত্বাবধানে চুক্তিটি সম্পন্ন হয়েছে এবং তাতে বাঁধটি কুর্দিদের বেসামরিক প্রশাসনের অধীনে থাকবে, যদিও নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকবে যৌথ সামরিক বাহিনীর হাতে।
সানা আরও জানায়, চুক্তির আওতায় একটি যৌথ নিরাপত্তা বাহিনী গঠন করা হবে, যারা বাঁধের নিরাপত্তা রক্ষা করবে এবং “যে সব বাহিনী এই চুক্তি ব্যাহত করতে চায়, তাদের প্রত্যাহার নিশ্চিত করা হবে।”
চুক্তিটি মার্চ মাসে প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারাআ ও এসডিএফ কমান্ডার মাজলুম আবদির মধ্যে স্বাক্ষরিত একটি বৃহত্তর সমঝোতার অংশ, যার লক্ষ্য হচ্ছে কুর্দি স্বায়ত্তশাসিত প্রশাসনের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্রীয় সরকারের আওতায় নিয়ে আসা।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে শুরু হওয়া সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে তিশরিন বাঁধ একটি গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধক্ষেত্র ছিল। প্রথমে এটি দায়েশের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়, পরে এসডিএফ সেটি পুনরুদ্ধার করে।
তবে সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ সরকারের পতনের পর আল-শারাআ নেতৃত্বাধীন জোট ক্ষমতা গ্রহণ করলে, তুরস্কের ড্রোন হামলায় বাঁধ লক্ষ্যবস্তু হয়। ওই হামলায় বহু নাগরিক এবং কুর্দি কর্মকর্তা নিহত হন, জানিয়েছে ব্রিটেনভিত্তিক যুদ্ধ পর্যবেক্ষক সংস্থা সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস।
বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি কেবল সিরিয়ার অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমন্বয় নয়, বরং তুরস্ক-সিরিয়া সম্পর্ক, কুর্দি নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক ভূরাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে।