
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে- জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সেনাবাহিনী নিয়ে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক মন্তব্যে স্পষ্ট ইঙ্গিত মিলেছে, যে এই সামরিক ব্যয় এখন আর শুধু নিরাপত্তার বিষয় নয়—এটি যুক্ত হচ্ছে বাণিজ্য আলোচনার টেবিলেও।
ট্রাম্প সম্প্রতি Truth Social-এ পোস্ট করে বলেন, সিউলের সাথে একত্রিতভাবে শুল্ক ও প্রতিরক্ষা ব্যয়ের “ওয়ান-স্টপ” আলোচনা হবে। তিনি ওয়াশিংটনে সফররত জাপানি কর্মকর্তাদের সাথেও এ বিষয়টি উত্থাপন করেন। বর্তমানে জাপানে প্রায় ৫০,০০০ এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় ২৮,৫০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে।
দুই দেশই চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার হুমকি থেকে বাঁচতে মার্কিন পারমাণবিক ছাতার ওপর নির্ভরশীল। তবে, ট্রাম্প পূর্বে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে মিত্ররা যদি যথেষ্ট অর্থ না দেয়, তাহলে তিনি সেনা প্রত্যাহার করতে পারেন।
দক্ষিণ কোরিয়ার প্রথম উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী কিম হং-কিউন পার্লামেন্টে বলেন, এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে SMA (Special Measures Agreement) পুনরায় আলোচনা নিয়ে কোনো প্রস্তাব পাওয়া যায়নি, তবে তারা সম্ভাব্য সব পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত। একইসঙ্গে দেশটির অর্থমন্ত্রী বলেন, বর্তমান চুক্তির আওতায় ব্যয় ভাগাভাগির বিষয়টি পুনরালোচনার মধ্যে নেই।
টোকিওও প্রতিরক্ষা খরচ ও শুল্ক ইস্যুকে আলাদা রাখতে চায় বলে জানিয়েছেন জাপানের এক কর্মকর্তা। তবে ট্রাম্পের এ ধরনের চাপ প্রয়োগকে কৌশলগত হুমকি হিসেবে দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
২০১৯ সালে দক্ষিণ কোরিয়া ও বাইডেন প্রশাসন একটি নতুন SMA চুক্তি স্বাক্ষর করে, যেখানে প্রথম বছরেই দক্ষিণ কোরিয়া ৮.৩% ব্যয় বৃদ্ধি করে $১.৪৭ বিলিয়ন দেয়। এরপরে বৃদ্ধি যুক্ত হয়েছে ভোক্তা মূল্য সূচকের সাথে। কিন্তু এখন যদি নতুন করে আলোচনা শুরু হয়, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়াকে আরও উচ্চ পরিমাণের ভিত্তি থেকে শুরু করতে হবে।
উল্লেখ্য, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইয়লের সাম্প্রতিক অভিশংসনের পর দেশটি এখন একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে চলছে, এবং নতুন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ জুন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের মন্তব্য শুধু সামরিক ব্যয় নয়, বরং বৃহত্তর অর্থনৈতিক চাপ তৈরির অংশ। এতে দক্ষিণ কোরিয়ার নিজস্ব পারমাণবিক অস্ত্র উন্নয়নের দাবিও নতুন করে উত্থাপিত হয়েছে।
মার্কিন কংগ্রেসে সম্প্রতি দেওয়া বক্তব্যে USFK কমান্ডার জেনারেল জেভিয়ার ব্রানসন বলেন, দক্ষিণ কোরিয়া শুধু প্রতিরক্ষা ব্যয়েই নয়, মার্কিন অস্ত্র ও যুদ্ধবিমান কেনাতেও বড় বিনিয়োগ করেছে, যা দুদেশের মজবুত অংশীদারিত্বের প্রমাণ।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই নতুন কৌশল এশিয়ার মিত্রদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে, এবং এটি নিরাপত্তা ও বাণিজ্যের মধ্যকার ব্যবধান আরও সংকুচিত করতে পারে। এখন দেখার বিষয়, টোকিও ও সিউল কতটা সফলভাবে এই দুটি ইস্যুকে আলাদা রাখতে পারে।