
স্বাধীনতার স্বপ্নে বন্দি এক জাতি, কারাগারই যেন তাদের নিত্যবাস আলজাজীরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে -প্রতি বছর ১৭ এপ্রিল ফিলিস্তিনি বন্দি দিবস পালিত হয়, ইসরায়েলি কারাগারে আটক হাজার হাজার ফিলিস্তিনির দুর্দশা ও স্বাধীনতার সংগ্রামকে স্মরণ করে। ১৯৭৪ সালে ইসরায়েলের সঙ্গে প্রথম বন্দি বিনিময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত মাহমুদ বাকর হিজাজির স্মরণে এই দিনটি নির্ধারণ করা হয়।
২০২৫ সালের এপ্রিলে, ফিলিস্তিনি অধিকার সংগঠন আদদামির তথ্যমতে, ইসরায়েলি কারাগারে প্রায় ১০,০০০ ফিলিস্তিনি আটক রয়েছেন। এদের মধ্যে—
৩,৪৯৮ জন আটক আছেন অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই (অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ডিটেনশন)
৪০০ জন শিশু
২৭ জন নারী
২৯৯ জন যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত
এই বন্দিদের অনেকেই “গোপন প্রমাণের” ভিত্তিতে, কোনো বিচার ছাড়াই মাসের পর মাস ধরে আটক রয়েছেন। শিশুদের ক্ষেত্রেও এই প্রক্রিয়া প্রয়োগ করা হয়।
শিশু বন্দিরা: আহমাদ মানাসরার বেদনাদায়ক গল্প
ইসরায়েলই একমাত্র দেশ, যারা শিশুদের সামরিক আদালতে বিচার করে। প্রতি বছর ৫০০ থেকে ৭০০ ফিলিস্তিনি শিশু আটক হয়, যাদের অধিকাংশের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকে পাথর নিক্ষেপ—যার সর্বোচ্চ শাস্তি ২০ বছর।
আহমাদ মানাসরা নামের এক কিশোর ১৩ বছর বয়সে আটক হন ২০১৫ সালে। তার চাচাতো ভাইয়ের সঙ্গে থাকাকালে, এক হামলার ঘটনায় তাকে মারধর করা হয়, মাথায় গুরুতর আঘাত পান। আইন অনুযায়ী, তাকে শাস্তি দেওয়া সম্ভব ছিল না তখন, তাই ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ তার ১৪ বছর হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে। এরপর তাকে ১২ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
৯.৫ বছর পর, মানসিক রোগে আক্রান্ত আহমাদকে অবশেষে মুক্তি দেওয়া হয় ২০২৫ সালের ১০ এপ্রিল।
যুদ্ধের মাঝে বন্দির সংখ্যা দ্বিগুণ
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত, হামাসের হামলার পর শুরু হওয়া যুদ্ধের প্রেক্ষিতে, ইসরায়েল প্রায় ৩০,০০০ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে। মুক্ত করেছে মাত্র ২,০০০ জনকে—অর্থাৎ প্রতি মুক্ত ফিলিস্তিনির বিপরীতে ১৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
সিজফায়ার ও বন্দি বিনিময়
সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির সময়, ইসরায়েল ১,৭৯৩ জন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেয়, আর হামাস ৩৮ জন ইসরায়েলি বন্দিকে (তাদের মধ্যে ৮ জনের মরদেহ) ফিরিয়ে দেয়। মুক্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে—
গাজা থেকে ৭৩৯ জন
ওয়েস্ট ব্যাংক থেকে ৬৫২ জন
অধিকাংশ মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যক্তি ছিলেন গাজার উত্তর, গাজা শহর ও খান ইউনিসের বাসিন্দা।
১৯৬৭ থেকে আজ পর্যন্ত: ১০ লাখ ফিলিস্তিনি আটক
ফিলিস্তিনি কমিশন অব ডিটেইনি’স হিসেবে, ১৯৬৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনি ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয়েছেন। অর্থাৎ প্রতি ৫ জনে ১ জনের জীবনে অন্তত একবার কারাগারে যাওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে।
এই গণগ্রেপ্তার কৌশল এখন আর নিছক নিরাপত্তার অজুহাতে সীমাবদ্ধ নয়, বরং অনেক ফিলিস্তিনির চোখে এটি এক পরিকল্পিত দমননীতি। দীর্ঘ দশকের বন্দিত্বের মধ্যে, বহু পরিবারের কাছে গ্রেফতার এক “অপরিহার্য বাস্তবতা”।
স্বাধীনতার স্বপ্নে বন্দি এক জাতি, কারাগারই যেন তাদের নিত্যবাস।