
গাজা ও ইউক্রেনে শান্তি আনার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে এখনও পুরন করতে পারি নাই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবার মুখোমুখি আরও একটি জটিল চ্যালেঞ্জের—ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণে আনা।
এই সপ্তাহে শনিবার রোমে ইরানের সঙ্গে দ্বিতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যা অনেকেই ভাবেননি সম্ভব হবে, বিশেষ করে ট্রাম্পের প্রথম দফা শাসনের সময় ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তি বাতিল ও ‘সর্বোচ্চ চাপ’ নীতি গ্রহণের পর। তবে সম্প্রতি ওমানে অনুষ্ঠিত এক বৈঠক উভয় পক্ষ ‘ইতিবাচক’ হিসেবে আখ্যা দেওয়ায় আলোচনা নিয়ে কিছুটা আশাবাদ তৈরি হয়েছে।
হোয়াইট হাউজ সূত্র জানায়, একটি অন্তর্বর্তী চুক্তির সম্ভাবনা তৈরি হলেও পূর্ণাঙ্গ সমঝোতা এখনও দূরের পথ। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেই বৃহস্পতিবার বলেন, “আমি ইরানকে আঘাত করতে চাই না। আলোচনাই আমার প্রথম পছন্দ। তবে বিকল্প থাকলে সেটা ইরানের জন্য খারাপ হবে।”
✉ আলোচনার নেতৃত্বে ব্যবসায়ী ও ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে আলোচনার নেতৃত্বে রয়েছেন স্টিভ উইটকফ—একজন রিয়েল এস্টেট ব্যবসায়ী যিনি কূটনীতিতে অনভিজ্ঞ, তবে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচিত। বিশ্লেষকরা বলছেন, তাঁর ট্রাম্পের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ থাকা সত্ত্বেও অভিজ্ঞতার অভাব ইরানি কৌশলবিদদের পক্ষে বাড়তি সুবিধা হতে পারে।
ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি এই আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন, যিনি একজন কঠিন ও অভিজ্ঞ আলোচক হিসেবে পরিচিত। তিনি সম্প্রতি বলেন, “ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ আমাদের অধিকার, এটি নিয়ে কোনও আলোচনা হতে পারে না।”
স্টিভ উইটকফ সম্প্রতি একাধিক বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে বিভ্রান্তি তৈরি করেছেন। কখনও বলেছেন, ইরান ‘নিম্নমাত্রায়’ সমৃদ্ধকরণ করতে পারবে, আবার বলেছেন পুরোপুরি ‘পরিত্যাগ’ করতে হবে। এতে করে ইরানের মধ্যে সন্দেহ তৈরি হয়েছে যে যুক্তরাষ্ট্র আদৌ চুক্তিতে আগ্রহী কিনা।
ট্রাম্পের আলোচনার ঘোষণা ইসরায়েলকে চমকে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলছেন, “লিবিয়ার ২০০৩ সালের মতো পরমাণু সম্পূর্ণ পরিত্যাগের চুক্তিই একমাত্র গ্রহণযোগ্য।” তবে বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ইরান এই ধরণের শর্ত কখনোই মানবে না।
গালফ দেশগুলো আলোচনার ধারাবাহিকতা চায়, তবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরান আলোচনার মাঝে নিজেদের বাদ পড়ে যাওয়া নিয়ে শঙ্কিত তারা।
জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্লেষক লরা ব্লুমেনফেল্ড বলেন, “ইরানের সঙ্গে একটি পারমাণবিক চুক্তি গাজা বা ইউক্রেন যুদ্ধের তুলনায় কম জটিল, কারণ এখানে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি পক্ষ এবং কূটনৈতিকভাবে বেশি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে।”
যদিও অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তবে ইরান-যুক্তরাষ্ট্র পরমাণু আলোচনা এখন বিশ্ব রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। ট্রাম্পের ‘শান্তির বার্তা’ বাস্তবে রূপ পাবে, নাকি এটি মধ্যপ্রাচ্যে আরও একটি সংঘর্ষের দিক নির্দেশ করবে—তা নির্ভর করছে রোমের আলোচনার ফলাফলের উপর।