
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের বিবৃতিতে বলা হয়- পরমাণু দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সরঞ্জাম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর অগণিত ক্ষতিপূরণের আশঙ্কা দূর করতে আইন শিথিলের পরিকল্পনা করছে ভারত সরকার। সরকারের তিনটি সূত্রে জানা গেছে, এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরমাণু সংস্থাগুলিকে আকৃষ্ট করা, যারা এতদিন ঝুঁকির কারণে ভারতীয় বাজারে প্রবেশ করতে পারেনি।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন সরকার পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন ২০৪৭ সালের মধ্যে ১০০ গিগাওয়াটে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে। পাশাপাশি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও শুল্ক নিয়ে আলোচনাতেও এই পদক্ষেপ সুবিধা এনে দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
সরকারের প্রস্তাবিত খসড়া আইনে ২০১০ সালের Civil Nuclear Liability Damage Act এর সেই ধারা বাদ দেওয়া হয়েছে, যা সরবরাহকারীদের সীমাহীন ক্ষতিপূরণের আওতায় ফেলে। পরিবর্তে দুর্ঘটনার জন্য অপারেটরের দায় নির্ধারিত থাকবে, যা আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
ডেলয়েট সাউথ এশিয়ার প্রধান প্রবৃদ্ধি কর্মকর্তা দেবাশীষ মিশ্র বলেন, “ভারতের জন্য পরমাণু শক্তি অপরিহার্য ও পরিচ্ছন্ন। দায় নির্ধারণে একটি সীমা থাকলে সরবরাহকারীদের প্রধান উদ্বেগ অনেকটাই দূর হবে।”
মূলত জেনারেল ইলেকট্রিক ও ওয়েস্টিংহাউস ইলেকট্রিকের মতো মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য এই পরিবর্তন আশা জাগাচ্ছে, যারা এতদিন ভারতীয় বাজারে প্রবেশ থেকে বিরত ছিল।
খসড়া আইনে বলা হয়েছে, দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে অপারেটরের সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করার সীমা থাকবে চুক্তিতে উল্লেখিত অর্থমূল্যে এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে। বর্তমানে এই আইনে ক্ষতিপূরণের পরিমাণ বা সময়সীমা নির্ধারিত নেই।
ভূপালে গ্যাস দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপট -ভারতের পরমাণু দায় আইন ১৯৮৪ সালের ভয়াবহ ভূপাল গ্যাস দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রণীত, যেখানে ইউনিয়ন কার্বাইড কর্পোরেশনের গ্যাস ফাঁসে ৫ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল। ওই দুর্ঘটনার পর, ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠানটি ৪৭০ মিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণে সম্মত হয়।
২০১০ সালের আইন কার্যত পশ্চিমা কোম্পানিগুলোর ভারতীয় বাজারে প্রবেশ বন্ধ করে দেয় এবং ২০০৮ সালে পারমাণবিক সহযোগিতা চুক্তি সত্ত্বেও ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কেও চাপ তৈরি করে। অপরদিকে, রাশিয়া ও ফ্রান্সের কোম্পানিগুলো তাদের সরকারের মাধ্যমে দায়বদ্ধতা থেকে সুরক্ষা পেয়ে এগিয়ে যায়।
নতুন আইনে ছোট পরমাণু চুল্লি পরিচালনাকারীদের জন্য দায়সীমা ৫৮ মিলিয়ন ডলারে সীমিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে, যদিও বড় চুল্লির ক্ষেত্রে বর্তমান সীমা ১৭৫ মিলিয়ন ডলার অপরিবর্তিত থাকছে।
বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম শক্তি ভোক্তা দেশ ভারত এখন পরমাণু শক্তিকে ব্যবহার করতে চায় পরিবেশবান্ধব ও টেকসই শক্তি উৎস হিসেবে। এতে বেসরকারি ভারতীয় কোম্পানিগুলোকেও প্রবেশাধিকার দেওয়া হতে পারে। ইতিমধ্যেই রিলায়েন্স, টাটা পাওয়ার, আদানি পাওয়ার ও ভেদান্ত সরকারের সঙ্গে প্রায় ৫.১৪ বিলিয়ন ডলার করে বিনিয়োগের আলোচনা করেছে।
পরমাণু শক্তিতে বিদেশি বিনিয়োগের পথ সুগম করতে ভারতের এই আইনি পরিবর্তন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই খসড়া আইন জুলাইয়ে মনসুন অধিবেশনে সংসদে কতটা সহজে পাস হয়।