
গত মাসে আইসিসির (ICC) হেফাজতে গ্রেফতার হওয়া বিশ্বজুড়ে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে এবং সেই সঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (ICC) এর কাছে আরও কিছু নেতার সম্ভাব্য বিচারকে সামনে এনে দিয়েছে। ডুটার্তে, যিনি মাদকদ্রব্য বিরোধী কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সমালোচিত ছিলেন, তার বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। যদিও ডুটার্তের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত চলছিল, তার গ্রেফতার অনেক বিশেষজ্ঞের কাছে অবাক করার মতো ছিল।
আইসিসির সাবেক বিশেষ উপদেষ্টা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন অধ্যাপক লেইলা সাদাত জানান, “এটা প্রথমবারের মতো যে আমরা এমন একটি পরিস্থিতি দেখলাম, যেখানে গ্রেফতারি পরোয়ানা গোপনে জারি করা হয় এবং একে একে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে দ্রুত গ্রেফতার করা হয়। এর আগে, উচ্চ পর্যায়ের নেতাদের ক্ষেত্রে সাধারণত প্রকাশ্যে পরোয়ানা জারি করা হতো।”
ডুটার্তের গ্রেফতারি আন্তর্জাতিক আদালতের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত, কারণ এটি ভবিষ্যতে অন্য নেতাদের বিচার শুরুর পথ প্রশস্ত করতে পারে, তবে এটি যে খুব সহজ নয় তা বলাই বাহুল্য। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর মতো নেতারা আইসিসির পরোয়ানায় অভিযুক্ত হলেও তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে অনেক রাজনৈতিক বাধা রয়েছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে আইসিসি মার্চ ২০২৩ সালে পুতিন এবং মেরিয়া লোভোভা-বেলোভাকে গ্রেফতারের জন্য পরোয়ানা জারি করেছে। তবে, রাশিয়া আইসিসির সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও, তাদের বিরুদ্ধে বিচার কার্যক্রম চালানো কঠিন। পুতিনের প্রতি গ্রেফতারি পরোয়ানা, বিশেষ করে তার শক্তিশালী শাসন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা, তাকে আইসিসির হেফাজতে নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব করে তোলে।
এছাড়া, নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে চলমান যুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আইসিসি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। তবে, ইসরায়েলও আইসিসির সদস্য নয় এবং দেশটি কখনো আইসিসির পরোয়ানা মানে না।
বিশ্বে আরও অনেক নেতার বিরুদ্ধে আইসিসি গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে, যার মধ্যে সাবেক সুদানী শাসক ওমর আল-বশির অন্যতম। কিন্তু আইসিসির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক চাপ, ইচ্ছার অভাব এবং বৈশ্বিক শক্তির দ্বৈত মানদণ্ডের কারণে এর কার্যক্রম প্রায়ই বাধাগ্রস্ত হয়ে থাকে।
তবে, ডুটার্তের গ্রেফতারি আইসিসির জন্য একটি ইতিবাচক সিগন্যাল হতে পারে, যা ভবিষ্যতে অন্য দেশের শীর্ষ নেতাদের বিচার নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে। আইন বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে, আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্য নেতাদের বিচার একদিন সম্ভব হবে এবং এটি দুনিয়াব্যাপী ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।