
ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে মধ্যস্থতাকারী ওমানের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় দফার পারমাণবিক আলোচনা শনিবার রোমে শেষ হয়েছে। ইরানি রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের খবরে বলা হয়েছে, উভয় পক্ষই আগামী সপ্তাহে তৃতীয় দফার আলোচনায় বসার বিষয়ে সম্মত হয়েছে।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ সরাসরি না হলেও ওমানি প্রতিনিধির মাধ্যমে বার্তা আদান-প্রদান করেছেন। গত সপ্তাহে মাসকটে প্রথম দফার আলোচনাকে ‘গঠনমূলক’ বলে উল্লেখ করেছিলেন উভয় পক্ষই।
রোমে আলোচনার আগে ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকে আরাকচি বলেন, “ইরান সর্বদা কূটনৈতিক সমাধানের পক্ষে এবং সকল পক্ষের উচিত এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একটি যৌক্তিক ও ন্যায্য পারমাণবিক চুক্তিতে পৌঁছানো।”
তিনি আরও বলেন, “এই চুক্তি ইরানের ন্যায়সংগত অধিকারকে স্বীকৃতি দেবে এবং একইসঙ্গে অন্যদের পারমাণবিক কার্যক্রম নিয়ে যে সন্দেহ রয়েছে, তা দূর করবে।”
ইতালির পররাষ্ট্রমন্ত্রী আন্তোনিও তাজানি এক্স-এ এক পোস্টে লেখেন, “রোম শান্তি ও সংলাপের রাজধানীতে পরিণত হয়েছে। আমি আরাকচিকে পরমাণু অস্ত্রবিরোধী আলোচনার পথ অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছি।”
চুক্তির পথে সংশয় ও আশাবাদ
যদিও আলোচনা এগোচ্ছে, ইরান এখনই কোনো চুক্তির আশায় ‘অতিরিক্ত আশাবাদ’ প্রকাশ করতে নারাজ। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেই বলেন, “আমি না অতিমাত্রায় আশাবাদী, না নিরাশ।”
ইসরায়েল meanwhile ইঙ্গিত দিয়েছে, পরবর্তী কয়েক মাসে তারা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালাতে পারে।
২০১৫ সালের চুক্তি এবং বর্তমান পরিস্থিতি
২০১৮ সালে ট্রাম্প প্রশাসন ইরান ও ছয় বিশ্বশক্তির মধ্যে হওয়া ঐতিহাসিক ২০১৫ সালের চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেয় এবং তেহরানের ওপর নতুন করে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পুনরায় প্রেসিডেন্ট হিসেবে ফিরে এসে ট্রাম্প ‘ম্যাক্সিমাম প্রেশার’ কৌশল আবারও কার্যকর করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র চায় ইরান তার উচ্চমাত্রার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ বন্ধ করুক, যা ওয়াশিংটনের দাবি অনুযায়ী পারমাণবিক বোমা তৈরির উদ্দেশ্যে ব্যবহার হতে পারে।
তবে ইরান বরাবরই দাবি করে এসেছে যে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি সম্পূর্ণভাবে শান্তিপূর্ণ এবং তারা কিছু নিয়ন্ত্রণ মানতে রাজি, তবে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কঠোর নিশ্চয়তা চায় যেন যুক্তরাষ্ট্র আবারও একতরফাভাবে চুক্তি থেকে সরে না দাঁড়ায়।
২০১৯ সাল থেকে ইরান ২০১৫ সালের চুক্তির শর্ত ভঙ্গ করে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি করেছে।
ইরানের লাল রেখা
একজন সিনিয়র ইরানি কর্মকর্তা জানান, ইরান তার সেন্ট্রিফিউজ সরানো, সমৃদ্ধকরণ সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করা বা ২০১৫ সালের শর্তের চেয়ে কম ইউরেনিয়াম মজুত রাখা মেনে নেবে না। এছাড়া, দেশটি তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি নিয়েও কোনো আলোচনা করতে নারাজ।
রাশিয়ার মধ্যস্থতার প্রস্তাব
রাশিয়া, ২০১৫ সালের চুক্তির অন্যতম পক্ষ, আলোচনায় সহায়তা ও মধ্যস্থতা করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।