
সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা নিয়ে নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। সিরিয়ার গৌলান হাইটস অঞ্চলে হামলা এবং অন্যান্য সিরীয় ভূখণ্ডে ইসরায়েলের আগ্রাসন দেশটির সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম লঙ্ঘন হিসেবে দেখা হচ্ছে। সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলাকে “স্পষ্টভাবে সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন” বলে আখ্যায়িত করেছে।
কীভাবে এবং কোথায় হামলা হয়েছে?
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২ এপ্রিল ইসরায়েল হামা বিমানবন্দর লক্ষ্য করে হামলা চালায়, যা সিরিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি। এ হামলায় বহু লোক আহত হয়েছে। এছাড়া, ইসরায়েল পামিরা শহরের কাছে ত-৪ বিমানবন্দরও লক্ষ্য করেছে, যা সেন্ট্রাল সিরিয়ার অন্যতম বৃহৎ এবং কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিমানবন্দর।
এরপর, ৫ এপ্রিল ইসরায়েল দক্ষিণ সিরিয়ার দেরা প্রদেশের নাওয়া এলাকায় গুলিবর্ষণ করে, যাতে ৯ জন সাধারণ নাগরিক নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হন।
সিরিয়া ও ইসরায়েলের সম্পর্ক কি ভালো নয়?
ইসরায়েল ও সিরিয়ার কখনোই আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিল না। সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার তত্ত্বাবধানে সিরিয়া সবসময় বলেছে যে, তারা ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধ চায় না এবং বাহ্যিক শক্তির আক্রমণের জন্য সিরিয়া ব্যবহার করতে দেবে না।
ইসরায়েলও সিরিয়ার সরকারের প্রতি নানাভাবে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এবং তাদের “আইডলিবের সন্ত্রাসী গোষ্ঠী” হিসেবে উল্লেখ করেছে। সিরিয়ার বর্তমান সরকারকেও তারা “হায়াত তাহরির আল-শাম” (HTS) গোষ্ঠী হিসেবে আখ্যায়িত করছে।
ইসরায়েল কেন সিরিয়ায় হামলা চালাচ্ছে?
ইসরায়েল নিজের নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য এই হামলাগুলি চালানোর কথা বলে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজামিন নেতানিয়াহু ফেব্রুয়ারিতে বলেছিলেন, “আমরা দক্ষিণ দামেস্কে HTS বা নতুন সিরিয়ান সেনাকে প্রবেশ করতে দেবো না।”
এছাড়া, ইসরায়েল সিরিয়ায় নিজেদের সেনাদের অবস্থান গড়ে তুলেছে এবং তাদের মতে, এই অঞ্চলে শান্তি বজায় রাখতে হলে সিরিয়ার ভূমি থেকে বাহ্যিক শক্তি তুলে নিতে হবে।
তুরস্কের প্রতিক্রিয়া
তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে বলেছে, ইসরায়েলকে সিরিয়া থেকে নিজেদের সেনা প্রত্যাহার করতে হবে। তুরস্কের দাবি, সিরিয়া শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে ইসরায়েলকে তার সম্প্রসারণবাদী নীতির পরিত্যাগ করতে হবে।
সিরিয়া কি করবে?
সিরিয়া বর্তমানে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চাইলেও তার হাতে কিছুই নেই, কারণ ১৪ বছর ধরে চলা গৃহযুদ্ধে সিরিয়া ইতোমধ্যেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সিরিয়ার বর্তমান সরকারও খুব কম সহযোগিতা বা সহায়তার জন্য অন্য দেশগুলোর কাছে যেতে পারছে।
সিরিয়ার লেখক রোবিন ইয়াসিন কাসাব বলেন, “সিরিয়ার সরকার নয়, সাধারণ মানুষই তাদের এলাকা রক্ষা করতে নিজেদের প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে।” তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েলি মিডিয়া এই স্থানীয় জনগণকে HTS সদস্য হিসেবে উপস্থাপন করছে, যা তাদের হামলার বৈধতা প্রতিষ্ঠা করতে সাহায্য করছে।”
সিরিয়ার ওপর ইসরায়েলের হামলা ও অঞ্চল সম্প্রসারণের এই পরিস্থিতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে নতুন উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তুরস্ক ও ইরান ইসরায়েলের এই কর্মকাণ্ডের তীব্র সমালোচনা করেছে। তবে সিরিয়ার পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সাহায্য কম এবং জনগণ তাদের প্রতিরোধ অব্যাহত রেখেছে