
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ শুক্রবার রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সেন্ট পিটার্সবার্গে এক দীর্ঘ বৈঠকে মিলিত হয়েছেন। বৈঠকটি চার ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে এবং মূলত ইউক্রেন যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা ও সমঝোতার দিকগুলো নিয়ে আলোচনা হয়।
ক্রেমলিন জানিয়েছে, এটি ছিল এই বছরের মধ্যে উইটকফ ও পুতিনের তৃতীয় বৈঠক, যা রাশিয়ার পক্ষ থেকে “গঠনমূলক” বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
ট্রাম্পের ক্ষোভ ও যুদ্ধবিরতির চাপ
বৈঠকের দিন ট্রাম্প সামাজিক মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে লিখেছেন:
“রাশিয়াকে এখনই এগিয়ে আসতে হবে। প্রতি সপ্তাহে হাজার হাজার মানুষ মরছে, এই যুদ্ধ অপ্রয়োজনীয় ও নিষ্ঠুর।”
এর আগে, ট্রাম্প একাধিকবার দাবি করেছেন তিনি চাইলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ থামাতে পারবেন, এবং এই যুদ্ধ শুরুই হতো না যদি তিনি ২০২২ সালে হোয়াইট হাউসে থাকতেন।
কেলগের ‘বিভাজন’ মন্তব্য ঘিরে বিতর্ক
ট্রাম্পের ইউক্রেন বিষয়ক দূত কিথ কেলগ–এর একটি সাক্ষাৎকারে বলা হয়েছিল, ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলে ব্রিটিশ ও ফরাসি সেনা মোতায়েন করে ‘নিরাপত্তা বলয়’ গড়ে তোলা যেতে পারে, আর পূর্বাঞ্চলে রুশ বাহিনী থাকবে। কেলগ নাকি বলেন,
“এটা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বার্লিন ভাগের মতো দেখাতেও পারে।”
তবে পরে কেলগ সামাজিক মাধ্যমে দাবি করেন, তাঁর বক্তব্য ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। তিনি লিখেছেন:
“আমি ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধবিরতির পর একটি সহায়ক বাহিনীর কথা বলেছি, বিভাজনের নয়।”
যুদ্ধবিরতির অগ্রগতি নেই, ইউরোপীয় উদ্বেগ
যেখানে যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধবিরতির জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, ইউরোপের প্রতিরক্ষামন্ত্রীরা এক সম্মেলনে জানিয়েছেন, তারা যুদ্ধের অবসান হতে দেখছেন না। এদিন ইউরোপ ইউক্রেনকে ২১০০ কোটি ইউরো (প্রায় ২৪০০ কোটি ডলার) সামরিক সহায়তা ঘোষণা করেছে।
পুতিন-ট্রাম্প বৈঠকের সম্ভাবনা?
ক্রেমলিন মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, “সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলছে, কিন্তু এই বৈঠকে বড় কোনো অগ্রগতি হবে না।” সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, পুতিন ও ট্রাম্পের সরাসরি বৈঠক নিয়ে আলোচনা হতে পারে, তবে তা নির্ভর করছে উইটকফ কী বার্তা নিয়ে এসেছেন তার ওপর।
জেলেনস্কির ক্ষোভ, চীনা সেনার অভিযোগ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি শুক্রবার নিজ শহর ক্রিভি রিহ-এ একটি রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১৯ জনের স্মরণে ফুল অর্পণ করেন। তিনি জানান, এদের মধ্যে ৯ জন শিশু ছিল। তিনি দাবি করেন,
“রাশিয়ার দখলদার বাহিনীতে শত শত চীনা নাগরিক লড়াই করছে।”
এই মন্তব্য আসে ইউক্রেন কর্তৃক দুই চীনা নাগরিক আটক করার পরপরই।
জেলেনস্কি আবারো উন্নত বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে বলেন,
“আমরা শুধু অনুরোধ করছি না, আমরাও এসব কিনতে প্রস্তুত। শক্তিশালী অস্ত্রই পারে জীবন রক্ষা করতে, বিশেষ করে যখন প্রতিবেশী রাশিয়া।”
রাশিয়া-মার্কিন সম্পর্ক: অগ্রগতি ও টানাপোড়েন
ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া সৌদি আরবে সরাসরি বৈঠক করেছে এবং সম্পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃস্থাপন নিয়ে আলোচনাও চলছে।
রাশিয়ার যুক্তরাজ্য রাষ্ট্রদূত আন্দ্রেই কেলিন বলেন, “আমরা দু’মাসে শূন্য বিশ্বাস থেকে পুরোপুরি মিল পর্যন্ত যেতে পারি না।” তবে ধাপে ধাপে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।