
যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্ট এক ঐতিহাসিক রায়ে জানিয়েছে, দেশটির সমতা আইনে “নারী” বলতে বোঝানো হবে জৈবিক নারীকে—ফলে ট্রান্স নারী এখন থেকে এই আইনের অধীনে নারীরূপে বিবেচিত হবেন না। এই রায় একলিঙ্গীয় শৌচাগার, হাসপাতালের ওয়ার্ড, খেলাধুলা ও নারীদের জন্য সংরক্ষিত স্থানগুলোর ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলতে চলেছে।
এই রায় Equality Act 2010-এর আওতায় “নারী” শব্দের ব্যাখ্যা প্রদান করে। অর্থাৎ, ট্রান্স নারীরা এখন থেকে ‘নারী’ হিসেবে রক্ষিত থাকবেন না, তবে লিঙ্গ পরিবর্তনের জন্য বৈষম্যের শিকার হলে তারা এখনো আইনি সুরক্ষা পাবেন।
কিন্তু সমতা বিষয়ক সংস্থা EHRC জানিয়েছে, তারা শীঘ্রই একলিঙ্গীয় স্থানগুলো সম্পর্কে নতুন দিকনির্দেশনা প্রকাশ করবে।
:
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ার কিশওয়ার ফকনার বলেন,
“এই রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেয় যে, একলিঙ্গীয় পরিষেবাগুলি জৈবিক লিঙ্গের ভিত্তিতে হতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, ট্রান্স জনগোষ্ঠীর জন্য তৃতীয় লিঙ্গ ভিত্তিক (unisex) স্থান তৈরি করা যেতে পারে।
এনএইচএস (NHS)-এর বর্তমান নীতিতে ট্রান্স ব্যক্তিদের পোশাক, নাম ও সর্বনাম অনুসারে ওয়ার্ডে স্থান দেওয়া হয়। কিন্তু নতুন রায়ের প্রেক্ষিতে NHS-কে এই নীতি পর্যালোচনা করতে হতে পারে।
ব্রিটিশ ট্রান্সপোর্ট পুলিশ জানায়, এখন থেকে যেকোনো ব্যক্তির হেফাজতে দেহ তল্লাশি তার জন্মগত জৈবিক লিঙ্গ অনুসারে করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায় নারীদের খেলাধুলায় ট্রান্স নারীদের অংশগ্রহণ সীমিত করতে পারে। ওয়ার্ল্ড অ্যাথলেটিক্সের মতো, EHRC-ও ট্রান্স নারীদের নারীদের প্রতিযোগিতায় নিষিদ্ধ করার পক্ষে মত দিয়েছে।
ট্রান্স অধিকার সংস্থা TransActual UK-এর পরিচালক জেন ফে বলেন,
“এই রায় আমাদেরকে সমাজ থেকে কার্যত মুছে দিয়েছে। এটি যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার ইতিহাসে এক ভয়াবহ পশ্চাদপসরণ।”
তাদের দাবি, Gender Recognition Act 2004 এখন কার্যত গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। কারণ আইনগতভাবে ‘নারী’ স্বীকৃতি পেলেও, এই রায়ের ফলে তা অনেক ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য হবে না।
রায়ে বলা হয়েছে, “জন্মের সময় যিনি নারী ছিলেন তিনিই জৈবিক নারী।” কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, ইন্টারসেক্স মানুষ বা শরীরিকভাবে নারীর মতো ট্রান্স নারীদের কোথায় রাখা হবে?
রায়টি ট্রান্স নারীদের নারীরূপে স্বীকৃতি দেওয়ার ধারণার বিরোধিতা করেছে, ফলে এটি সংস্কৃতি যুদ্ধ ও রাজনৈতিক বিভাজন আরও বাড়িয়ে তুলছে।
লেখিকা জে.কে. রাওলিং, যিনি এই মামলার পেছনে অর্থায়ন করেছিলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। অন্যদিকে, LGBTQ+ অধিকার সংগঠনগুলো রায়কে “পিছিয়ে যাওয়া” বলে আখ্যায়িত করেছে।
সরকার জানিয়েছে, “একলিঙ্গীয় স্থান সবসময় সুরক্ষিত থাকবে এবং এই রায় পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য নিশ্চিততা এনেছে।”
লেবার পার্টির কিয়ার স্টারমার এখনো রায় নিয়ে মুখ খোলেননি, তবে রায়ের ফলে তিনি বিতর্ক এড়িয়ে যেতে পারেন বলে বিশ্লেষকদের মত।
কনজারভেটিভ পার্টির নেত্রী কেমি ব্যাডেনক বলেছেন,
“‘ট্রান্স নারী মানেই নারী’—এই কথাটি কখনো সত্য ছিল না এবং এখন এটি আইনি দিক থেকেও সত্য নয়।”
একাধিক ট্রান্স অধিকার সংগঠন ও শ্রমিক ইউনিয়ন শনিবার লন্ডনে প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে। তারা বলছে, “এই রায় সাম্প্রতিক বছরগুলোর ধারাবাহিক ট্রান্স-বিরোধী প্রচারণার ফল।”
যুক্তরাজ্যের সুপ্রিম কোর্টের এই রায় নারী ও লিঙ্গ পরিচয় সংক্রান্ত নীতিতে এক বড় পরিবর্তন এনেছে। এটি নারীদের সুরক্ষার প্রশ্নে কিছু মানুষকে আশাবাদী করেছে