
তালেবান সরকারের সিদ্ধান্তের কারণে আফগানিস্তানে মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা বন্ধ করা হয়েছে, যা নিয়ে সরকারী কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব বেড়েই চলেছে। মেয়েদের শিক্ষা নিষিদ্ধ করার পর থেকে অন্তত এক মন্ত্রী আফগানিস্তান ত্যাগ করেছেন এবং অনেক পরিবার তাদের মেয়েদের শিক্ষা চালিয়ে যেতে আফগানিস্তান ছেড়ে পালাচ্ছে।
ইসলামিক শাসন প্রতিষ্ঠার পর তালেবান শাসিত আফগানিস্তানে ধর্মীয় পুলিশ দেশের বৃহৎ অংশে নিয়ম প্রয়োগ করছে, যা দেশটির পরিস্থিতি আরও কঠোর করে তুলেছে। তালেবানের মধ্যেই কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করেছেন, এবং তারা এটি ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছেন।
তালেবান সরকারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন যে, সরকারের মধ্যে মতভেদ রয়েছে, তবে সরকারে কোনো বড় ধরনের অস্থিরতা নেই। তবে, আফগানিস্তানের বিদেশ মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত উপমন্ত্রী শের মোহাম্মদ আব্বাস স্টানিকজাই জানুয়ারির ১৮ তারিখে এক গ্র্যাজুয়েশন অনুষ্ঠানে মেয়েদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানান। তিনি বলেন, তালেবান “অন্যায় করছে” মেয়েদের শিক্ষা বন্ধ করে, এবং এটি শরিয়া আইন বিরোধী।
স্টানিকজাই পরে আফগানিস্তান ত্যাগ করেন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতে চলে যান, যা তার রাজনৈতিক অবস্থান এবং সরকারের “অযৌক্তিক ও অদুরদর্শী নীতির” বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বর্তমানে আফগানিস্তানে প্রায় ২.২ মিলিয়ন মেয়ে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত, এবং তালেবান তাদের নীতি পরিবর্তন করার কোনো লক্ষণ দেখাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে অনেক পরিবার পাকিস্তান, ইরান এবং তুরস্কে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে, যেখানে মেয়েদের শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সীমান্ত পার করেছে।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, এই পরিবারগুলি নিজেদের এবং তাদের মেয়েদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যদিও তা অনেক সময় অবৈধ এবং বিপজ্জনক হয়।
তবে, তালেবানের শীর্ষ নেতা হায়বাতুল্লাহ আখুন্দজাদা, যিনি কন্দাহারে অবস্থান করছেন, এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা মেয়েদের শিক্ষার বিষয়ে আরও কঠোর নীতি অনুসরণ করছেন, এবং এই অবস্থান পরিবর্তন করা তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে যখন এটি “শরিয়া আইন” হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, তালেবান সরকারের নীতির পরিবর্তন করা কঠিন, কারণ এটি শুধুমাত্র নীতির বিষয় নয়, বরং এটি এখন আইন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।