
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নকে (ইইউ) একত্র হয়ে বিশ্বায়ন রক্ষা এবং একতরফা শুল্ক ‘বুলিংয়ের’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক নীতিকে উদ্দেশ্য করেই এই মন্তব্য করেন শি, যদিও সরাসরি নাম উল্লেখ করেননি।
শি বলেন, “শুল্ক যুদ্ধে কোনো বিজয়ী নেই। বিশ্ব বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষায় ইইউ’র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “চীন সবসময়ই ইউরোপীয় ইউনিয়নকে একটি গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে দেখে এবং এর ঐক্য ও বিকাশকে সমর্থন করে।”
ইইউ-চীন সম্পর্ক আরও ভারসাম্যপূর্ণ হোক: সানচেজ
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেন, “বিশ্বের স্বার্থে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনার দরকার আছে। বাণিজ্য যুদ্ধ কারও জন্যই ভালো নয়।” তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই চীনের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর হোক, তবে চীনকেও ইউরোপের উদ্বেগগুলোকে গুরুত্ব দিতে হবে, বিশেষ করে বাণিজ্য ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।”
উল্লেখ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চীনের বাণিজ্য ঘাটতি গত বছরই ৩০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ও পাল্টা চীন প্রতিক্রিয়া
ট্রাম্প সম্প্রতি বহু দেশের ওপর নতুন করে উচ্চ শুল্ক আরোপ করেন, যার মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নও ছিল। পরে তিনি ৯০ দিনের জন্য ইইউ’র উপর শুল্ক হ্রাসের ঘোষণা দিলেও চীনের ওপর শুল্ক ১৪৫% পর্যন্ত বাড়িয়ে দেন। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় চীনও যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর ১২৫% শুল্ক আরোপ করেছে।
সানচেজ আশা প্রকাশ করেন, ইউরোপীয় কমিশন এই ৯০ দিনের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি “সর্বোত্তম চুক্তি” করতে পারবে। ইইউ আপাতত তাদের নিজস্ব পাল্টা শুল্ক আরোপ স্থগিত রেখেছে।
চীন-স্পেন চুক্তি স্বাক্ষর
স্পেনের প্রধানমন্ত্রীর এটি ছিল গত তিন বছরে তাঁর তৃতীয় বেইজিং সফর। সফরকালে চীন ও স্পেনের মধ্যে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিক্ষা ও চলচ্চিত্র শিল্পসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। পাশাপাশি চেরি ও শুকর মাংস রপ্তানির বিষয়ে নতুন প্রোটোকলও স্বাক্ষর হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের হুঁশিয়ারি প্রত্যাখ্যান স্পেনের
যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার বিষয়ে স্পেনকে সতর্ক করে বলা হয়েছিল, “নিজের গলায় ছুরি চালানোর মতো সিদ্ধান্ত হতে পারে”। তবে স্পেন সেই হুঁশিয়ারি প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, “আমরা কৌশলগতভাবে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী, তবে সেটা অবশ্যই ইউরোপের স্বার্থ মাথায় রেখেই হবে।”
ইইউ চীনকে একাধারে “সহযোগী, অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং একটি পদ্ধতিগত প্রতিদ্বন্দ্বী” হিসেবে বিবেচনা করে।