
গ্রিনল্যান্ডে মার্কিন সামরিক ঘাঁটির প্রধান কর্নেল সুজানাহ মায়ার্সকে বরখাস্ত করা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি ভাইস-প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের ডেনমার্ক-বিরোধী মন্তব্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নেওয়ার জন্য একটি ইমেইল পাঠিয়েছিলেন।
মার্কিন সামরিক বাহিনীর স্পেস অপারেশনস কমান্ড জানিয়েছে, গ্রিনল্যান্ডের পিটুফিক স্পেস বেসে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্যতার ওপর “আস্থা হারানোর” কারণে কর্নেল মায়ার্সকে অপসারণ করা হয়েছে।
গত মাসে ভ্যান্স ডেনমার্ক সফরে গিয়ে বলেন, ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ডবাসীদের জন্য “ভালো কাজ করেনি” এবং নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত বিনিয়োগও করেনি।
একটি সামরিক সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হওয়া একটি ইমেইলে কর্নেল মায়ার্স তাঁর ঘাঁটির সদস্যদের জানান, ভ্যান্সের মন্তব্য “ঘাঁটির দৃষ্টিভঙ্গির প্রতিফলন নয়।” ৩১ মার্চ ভ্যান্সের সফরের পর তিনি লেখেন: “আমি রাজনীতি খুব ভালো বুঝি না, তবে যা জানি, তা হলো—ভাইস-প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছেন, সেগুলো পিটুফিক স্পেস বেসের অবস্থান নয়।”
পেন্টাগনের প্রতিক্রিয়া
Military.com এই ইমেইলটি প্রকাশ করে এবং জানায়, মার্কিন স্পেস ফোর্স তাদের ইমেইলের সত্যতা নিশ্চিত করেছে। পেন্টাগনের মুখপাত্র শন পারনেল এক্স (পূর্বতন টুইটার)-এ এই প্রতিবেদন শেয়ার করে লেখেন: “চেইন অব কমান্ডকে অবমূল্যায়ন বা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এজেন্ডাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার মতো কার্যক্রম প্রতিরক্ষা দপ্তরে সহ্য করা হবে না।”
স্পেস ফোর্সের এক বিবৃতিতে জানানো হয়, কর্নেল মায়ার্সের স্থানে কর্নেল শন লি দায়িত্ব নিচ্ছেন। কর্নেল লি এর আগে আলাস্কার ক্লিয়ার স্পেস ফোর্স স্টেশনে স্কোয়াড্রন কমান্ডার ছিলেন।
গ্রিনল্যান্ড ইস্যুতে রাজনৈতিক উত্তেজনা
ভ্যান্স তাঁর সফরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুরনো পরিকল্পনা পুনরায় উল্লেখ করেন—গ্রিনল্যান্ডকে নিরাপত্তার স্বার্থে যুক্তরাষ্ট্রের অংশ হিসেবে সংযুক্ত করা। কিন্তু এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে ডেনমার্ক ও গ্রিনল্যান্ড উভয়ই।
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী মেটে ফ্রেডেরিকসেন সম্প্রতি গ্রিনল্যান্ড সফরে গিয়ে স্থানীয় প্রধানমন্ত্রী জেন্স-ফ্রেডেরিক নিলসেন ও তার পূর্বসূরি মুতে এগেদেকে সঙ্গে নিয়ে বলেন, “আপনি অন্য কোনো দেশ জবরদখল করতে পারেন না।”
তিনি জানান, আর্কটিক অঞ্চলে ডেনমার্কের সামরিক উপস্থিতি জোরদার করা হচ্ছে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সহযোগিতার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।
গ্রিনল্যান্ডের ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব
গ্রিনল্যান্ড, বিশ্বের বৃহত্তম দ্বীপ, প্রায় ৩০০ বছর ধরে ডেনমার্কের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, নাৎসি জার্মানি ডেনমার্ক দখল করার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র এখানে সামরিক ঘাঁটি স্থাপন করে।
ডেনমার্কের প্রতিরক্ষা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মার্ক জ্যাকবসেন বিবিসিকে বলেন, “যদি রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের দিকে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে, তবে গ্রিনল্যান্ড ও উত্তর মেরুর পথই সবচেয়ে ছোট। এ কারণেই পিটুফিক স্পেস বেস যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”