
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত ৯০ দিনের সময়সীমায় ১৫০টি বাণিজ্যিক চুক্তি সম্পাদনের পরিকল্পনা নিয়ে বিশ্ববাজারে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। হঠাৎ করে ঘোষিত বিপুল পরিমাণ ট্যারিফ (শুল্ক) আরোপ ও পরে ‘বিশ্বকে ভয় দেখিয়ে’ চুক্তির টেবিলে আনার কৌশল নিয়ে আর্থিক বাজারে আস্থার সংকট স্পষ্ট।
বিশ্লেষকদের মতে, এত অল্প সময়ে এতগুলো জটিল দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন করা প্রায় অসম্ভব। ফলে শেয়ার বাজার, বন্ড, ডলার ও তেলের দামে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। বৃহস্পতিবার শেয়ার বাজারে বড় ধরনের পতনের পর শুক্রবার কিছুটা স্থিতিশীলতা ফিরলেও, বাজার এখনো চরম উদ্বেগে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এ ধরনের একতরফা শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রকেই শেষ পর্যন্ত বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে ফেলতে পারে। এমনকি চীনের সাথে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ আরও গভীর আকার নিতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র চীনের পণ্যের ওপর ১৪৫% পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে, আর চীন পাল্টা জবাবে ১২৫% শুল্ক দিয়েছে।
তেল ও বন্ড বাজারেও অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সাধারণত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় বন্ডের দাম বাড়ে, কিন্তু এবার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে—বন্ডের দাম পড়ছে এবং সুদের হার দ্রুত বাড়ছে। অপরদিকে তেলের দাম কমে এসেছে ৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে, যা রিসেশনের (মন্দা) পূর্বাভাস বলে ধরা হচ্ছে।
মুদ্রা বাজারেও ডলারের মান পড়েছে, যা সাধারণ নিয়মের বাইরে। সাধারণত শুল্ক আরোপে স্থানীয় মুদ্রার মান বাড়ে, কিন্তু বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন যুক্তরাষ্ট্র এ যুদ্ধে নিজেই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে ডলারের মান তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্নে নেমে এসেছে।
তবে ট্রাম্প প্রশাসন আশাবাদী। তারা বলছে, ৭০টিরও বেশি দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে বিশ্লেষকদের মতে, এত স্বল্প সময়ে এত চুক্তি বাস্তবায়ন প্রায় অসম্ভব। বিশেষ করে যখন চীন পুরোপুরি বিরোধিতা করছে, তখন বাজারের স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ইতোমধ্যেই ট্রাম্পের শুল্কনীতি বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধাক্কা দিয়েছে। আর এই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে। জেপিমরগ্যান ও গোল্ডম্যান স্যাচসের মতে, যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্ব অর্থনীতির মন্দায় পড়ার সম্ভাবনা এখন ‘কয়েন টস’-এর মতো, অর্থাৎ ৫০/৫০।