
ইসরায়েলের সঙ্গে হামাসের যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর গাজায় চালানো নতুন দফার সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত প্রাণ হারিয়েছে ১,৫০০-এরও বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের মধ্যে অন্তত ৫০০ শিশু। গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা UNRWA প্রধান ফিলিপ লাজারিনি গাজার পরিস্থিতিকে বর্ণনা করেছেন “পরমাণু-পরবর্তী হত্যাযজ্ঞের ময়দান” হিসেবে। তিনি জানান, ইসরায়েল পরিকল্পিতভাবে খাদ্য, ওষুধ, জ্বালানি প্রবেশে বাধা দিচ্ছে যা আন্তর্জাতিক আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
শনিবার ইসরায়েলি বিমান হামলায় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে একজন শিশু। গাজা শহরের তুফাহ এলাকায় হামলায় দুইজন নিহত ও দুই শিশু আহত হয়। উত্তরের বেইত লাহিয়ার আল-আতারায় আরো দুইজন নিহত হয়েছেন। খান ইউনুসের কিজান আন-নাজ্জার এলাকায় ড্রোন হামলায় মারা যান এক ফিলিস্তিনি।
গাজার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় খান ইউনুসের আল-মাওয়াসি এলাকায়, যেটি ইসরায়েল “নিরাপদ অঞ্চল” হিসেবে চিহ্নিত করেছিল, সেখানে শরণার্থী শিবিরে চালানো হামলায়ও হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। দেইর আল-বালাহর আল-আহলি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এক নবজাতক শিশুর হাত কেটে ফেলতে হয়, পরে সে মৃত্যুবরণ করে।
শুক্রবার জাতিসংঘ মানবাধিকার হাই কমিশনারের মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি জানান, গত ১৮ মার্চ থেকে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ইসরায়েলি চালানো ২২৪টি বিমান হামলার মধ্যে ৩৬টি হামলায় নিহতদের সবাই নারী ও শিশু।
ফিলিস্তিনি মানবাধিকার সংগঠন আল-হক জানায়, “নারী, শিশু, এমনকি নবজাতকদের পরিকল্পিতভাবে হত্যার এমন দৃষ্টান্ত আধুনিক কোনো সংঘর্ষে দেখা যায়নি।”
UNRWA-র তথ্যমতে, যুদ্ধবিরতি ভাঙার পর থেকে গাজায় ৪ লাখ মানুষ নতুন করে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধের পর থেকে গাজার মোট ৯০ শতাংশ জনগণকে জোরপূর্বক তাদের বাসভূমি ছেড়ে পালাতে বাধ্য করা হয়েছে।
এ পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৫০,০০০ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১,১৫,৯৮১ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। জাতিসংঘ কর্মকর্তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, খাদ্য, পানি ও ওষুধের মারাত্মক সংকটে শিশু ও সাধারণ মানুষের জীবন ধ্বংসের মুখে।
“ফিলিস্তিনিরা আর জানে না কোথায় গেলে তারা নিরাপদ থাকবে”— বলছেন গাজা থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক হিন্দ খুদারি।
ইসরায়েল নতুন করে দক্ষিণ গাজায় জমি দখলের পরিকল্পনা নিয়েছে এবং জারি করেছে একের পর এক জোরপূর্বক সরিয়ে নেওয়ার আদেশ। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিন্দা সত্ত্বেও সামরিক অভিযান চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে তেল আবিব। সুত্রঃ আল জাজিরা ও বার্তা সংস্থাসমূহ । আন্তর্জাতিক প্রতিবেদন |