
ইরানের বিতর্কিত পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের প্রতিনিধিরা শনিবার ওমানে আলোচনায় বসেছেন। দীর্ঘদিন ধরে চলা উত্তেজনার মাঝে এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রথমবার ক্ষমতায় থাকাকালীন তেহরানের পরমাণু চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে প্রত্যাহার করে নেন। এরপর থেকে উভয় পক্ষের মধ্যে পরোক্ষ আলোচনা চললেও কার্যত কোনো অগ্রগতি হয়নি।
আলোচনার প্রেক্ষাপট ও প্রতিনিধিরা
এই আলোচনায় ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচির একজন মধ্যস্থতাকারী এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ অংশ নিচ্ছেন। আলোচনাগুলো পরোক্ষ হলেও, দুই পক্ষই সমঝোতার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেছে।
ট্রাম্প প্রশাসনের অবস্থান
ট্রাম্প ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর “সর্বোচ্চ চাপ” নীতি গ্রহণ করেন এবং নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন। তিনি বলেছিলেন, একটি চুক্তি সম্ভব হলেও, ইরান যদি পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ না করে, তাহলে সামরিক হামলা হতে পারে। এমনকি গত মাসে তিনি ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেইকে একটি চিঠিও পাঠিয়েছেন।
খামেনেই ও ইরানের হুঁশিয়ারি
আয়াতুল্লাহ খামেনেই যুক্তরাষ্ট্রের হামলার হুমকিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেন, “যদি বাইরের দিক থেকে কোনো বিপদ আসে, তবে এর উপযুক্ত ও শক্ত প্রতিক্রিয়া দেওয়া হবে।”
ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এসমাইল বাঘাই এই হুমকিকে আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য একটি “চরম অবমাননা” হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
তিনি X (সাবেক টুইটার)-এ লেখেন, “সহিংসতা থেকে সহিংসতা জন্মায়, শান্তি থেকে আসে শান্তি। যুক্তরাষ্ট্রের এখন বেছে নেওয়ার সময়— শান্তির পথ, নাকি পরিণতির পথ।”
ইতিহাসে উত্তেজনা ও বর্তমান প্রেক্ষাপট
১৯৭৯ সালের ইসলামি বিপ্লবের পর থেকে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক শত্রুতাপূর্ণ। ওই বিপ্লবে মার্কিন সমর্থিত শাহ মোহাম্মদ রেজা পাহলভির পতনের পর তেহরানে মার্কিন দূতাবাস দখল করে ৪৪৪ দিনের জিম্মি সংকট তৈরি হয়, যা দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে।
২০১৫ সালে পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে ইরান ও বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলোর মধ্যে একটি ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই চুক্তির আওতায় ইরান ইউরেনিয়াম মাত্র ৩.৬৭% পর্যন্ত সমৃদ্ধ করতে পারত এবং সর্বোচ্চ ৩০০ কেজি (৬৬১ পাউন্ড) স্টকপাইল রাখতে পারত।
তবে আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা IAEA-এর সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ইরানের ইউরেনিয়াম মজুত এখন ৮,২৯৬ কেজি (১৮,২৮৬ পাউন্ড), যার একটি অংশ ৬০% পর্যন্ত সমৃদ্ধ করা হয়েছে— যা অস্ত্র তৈরির মানের খুব কাছাকাছি।
যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা মূল্যায়ন
মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, ইরান এখনো পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি শুরু করেনি, তবে তারা এমন কিছু কর্মকাণ্ড পরিচালনা করেছে যা ভবিষ্যতে অস্ত্র তৈরির উপযোগী অবস্থান তৈরি করছে।
ইরানের অবস্থান
ইরান দীর্ঘদিন ধরে দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দেশটির কর্মকর্তারা অস্ত্র তৈরির হুমকিও দিয়েছেন, যা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও শঙ্কিত করে তুলেছে।
এই আলোচনার মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের বরফ গলবে কি না, এখন সেটাই দেখার বিষয়। তবে একাধিক সংকেত ইঙ্গিত করছে— দুই পক্ষই এবার অন্তত একটি বাস্তবসম্মত সমঝোতার দিকে অগ্রসর হতে চায়