
প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ চিত্তরঞ্জন কৌশল বলেন, “শিশুদের জন্য প্রথম কয়েকটি বছর অত্যন্ত মন্ত্রমুগ্ধকর। এই সময়েই একটি ক্ষুদ্র কোষের মণ্ডল থেকে একদিকে ভাবনা, অনুভুতি, প্রশ্ন করার ক্ষমতা অর্জিত হয়। শিশুরা তাদের গুণাবলী যেমন কৌতূহল, সৃজনশীলতা, সহানুভূতি, সংহতি, সঙ্কট মোকাবিলা ইত্যাদি জীবনের প্রথম বছরগুলোতেই শেখে। তারা কখনো পরিকল্পনা করে না, তারা শুধু শেখে — এটিই শিশুকালের জাদু।”
তিনি আরো বলেন, শিশুদের জন্য প্রাথমিক শিশুশিক্ষা (ECD) শুধুমাত্র কিছু কার্যক্রম বা শিক্ষামূলক কার্যক্রমের সম্মিলন নয়, বরং একটি বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ। এতে শিশুরা সঠিক পরিবেশে বেড়ে উঠবে এবং তাদের জীবনকে পূর্ণতা দেবে।
কৌশল প্রাথমিক শিক্ষার স্তরে শিক্ষক প্রশিক্ষণ এবং কারিকুলাম উন্নয়নের উপর জোর দেন, কিন্তু বর্তমানে ভারতে শিশুশিক্ষা নীতি কিছু গুরুত্বপূর্ন সমস্যার মধ্যে পড়েছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন যে, “বর্তমানে, ‘প্রাথমিক সাক্ষরতা এবং গাণিতিক দক্ষতা’ (FLN) এর ধারণা একে অপরের সাথে গুলিয়ে যাচ্ছে, এবং অনেক স্থানে এটি শিশুশিক্ষার সমার্থক হয়ে উঠেছে।”
তিনি যোগ করেন যে, শিক্ষকদের উন্নতি এবং তাদের দক্ষতার বিকাশে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে, কারণ প্রযুক্তি ও অ্যাপের মাধ্যমে শুধু সমস্যার সমাধান করা সম্ভব নয়। প্রযুক্তি ব্যবহারের দিকে বেশি মনোনিবেশ করার ফলে অনেক ক্ষেত্রে শিক্ষকদের ভূমিকা হ্রাস পাচ্ছে এবং শিশুশিক্ষার প্রকৃত জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
কৌশল তাঁর বক্তৃতায় আরও বলেন, সমাজে চারটি “tion”-এর উপর গুরুত্ব দেন, যা শিক্ষানীতির ধারাকে প্রভাবিত করে। এগুলো হল:
শিক্ষার প্রতিষ্ঠানিকরণ
সম্প্রদায়ের নগরায়ণ
বিশ্বায়ন
প্রক্রিয়া ও ফলাফলগুলির মানকরণ
এই “tion”-গুলি সমাজের শ্রেণিবদ্ধতার জন্য দায়ী, যা শিশুদের প্রকৃত শিক্ষার অভিজ্ঞতাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং তাদের শারীরিক, মানসিক এবং আবেগিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করে।
অবশেষে, কৌশল বলেন, “আমাদের উচিত প্রাথমিক শিক্ষার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা এবং শিশুদের জন্য একটি সমৃদ্ধ, সম্পর্কমুখী ও নিরাপদ পরিবেশ তৈরি করা। সঠিক শিক্ষক, প্রকৃত সম্পর্ক, এবং পারিপার্শ্বিকতা এই ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।”
এটি এমন একটি সময় যখন ভারত প্রাথমিক শিশুশিক্ষা ক্ষেত্রে বৃহত্তর পরিবর্তন আনার চেষ্টা করছে, তবে এখনও অনেক কিছু করা বাকি