
বিএনপি তিস্তা নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় এবং তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে পাঁচটি জেলা জুড়ে দুদিনের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেছে। তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলনের উদ্যোগে এই কর্মসূচিতে বিএনপি এবং তার মিত্র সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা অংশ নিচ্ছেন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জনসভায় বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, “ভারতকে পরিষ্কার করে বলতে চাই, যদি তারা বাংলাদেশের জনগণের সাথে বন্ধুত্ব করতে চান, তবে আগে তিস্তার পানি দিতে হবে, সীমান্তে গুলি করে হত্যা বন্ধ করতে হবে, এবং আমাদের সাথে বড় দাদার মতো আচরণ বন্ধ করতে হবে। আমরা ভারতের সঙ্গে বন্ধুত্ব চাই, তবে তা হবে সম্মানজনক এবং আমাদের পাওনা বুঝিয়ে দেয়ার মাধ্যমে।”
এ কর্মসূচিতে বিএনপির নেতারা দাবি করেছেন, তিস্তা নদীর পানি নিয়ে বাংলাদেশের জনগণের দুর্ভোগ দূর করতে ভারতকে চাপ তৈরি করার লক্ষ্যেই তারা এই আন্দোলন চালাচ্ছে। তারা বলেছেন, সমমনা দলসহ তিস্তা অঞ্চলের সামাজিক সংগঠনগুলিকেও এই কর্মসূচিতে যুক্ত করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, তিস্তা ইস্যু নিয়ে কর্মসূচি থাকলেও বিএনপি আসলে এর মাধ্যমে নির্বাচন বিষয়ক নানা বার্তা দিতে চাইছে। বিশেষ করে, তারা সরকারকে নির্বাচনের জন্য চাপ প্রয়োগ করতে চায় এবং জনগণের কাছে জনকল্যাণমূলক ইস্যু তুলে ধরার চেষ্টা করছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বলেন, “তিস্তা সংকটের সমাধান চাই, যাতে জনগণ তাদের দাবি আদায় করতে পারে।”
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেন, “দুর্ভোগ তৈরি করে এমন প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে বিএনপির দৃষ্টিভঙ্গি জনগণের কাছে আরও স্পষ্ট হবে তিস্তাপাড়ে এই কর্মসূচির মাধ্যমে।”
তিস্তা নদী বাংলাদেশ এবং ভারতের মধ্যে প্রবাহিত একটি অভিন্ন নদী। শুষ্ক মৌসুমে পানি ভাগাভাগি নিয়ে দুই দেশের মধ্যে চুক্তি চূড়ান্ত হলেও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতায় তা বাস্তবায়িত হয়নি। এর ফলে, ভারত তিস্তার পানির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, যা বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
এ কর্মসূচিতে অংশ নিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হবেন এবং তিস্তা নদী রক্ষা আন্দোলন সমর্থন করবেন। এই আন্দোলন বর্তমানে লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, রংপুর এবং গাইবান্ধা জেলায় সমাবেশ, পদযাত্রা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক মোহাম্মদ মজিবুর রহমান বলেন, “বিএনপি তিস্তা ইস্যুকে কেন্দ্র করে জনগণের মধ্যে শক্ত অবস্থান দেখানোর পাশাপাশি নির্বাচনী প্রস্তুতি হিসেবে এটিকে ব্যবহার করছে।”
এই কর্মসূচি থেকে বিএনপি ভারতকে তিস্তা পানির ন্যায্য হিস্যা দেয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে, পাশাপাশি সরকারের কাছে নির্বাচনের সময়সীমা নিশ্চিত করার বার্তা পাঠাচ্ছে।