
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন বিশ্ব অর্থনীতিতে উত্তেজনার আগুন লাগালেন, তখন তিনি নিজেই ছিলেন ফ্লোরিডার এক গলফ মাঠে। এরপর এক সপ্তাহ কাটিয়েছেন দাতাদের সঙ্গে বিলাসবহুল ডিনার করে, গলফ খেলে এবং ঘোষণা দিয়ে – “এটা ধনী হবার সেরা সময়”, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রসহ সারা বিশ্বে বাজারে ধস নামছে।
ট্রাম্পের এমন দৃষ্টিকটু আচরণ রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মনে করিয়ে দিয়েছে রোমান সম্রাট নেরোর কথা, যিনি রোম জ্বলতে জ্বলতে বেহালা বাজিয়েছিলেন। ট্রাম্পের এই ‘দ্বিতীয় মেয়াদের রাজকীয়’ শাসনব্যবস্থাকে বিশ্লেষকরা বলছেন, ‘একজন উন্মত্ত রাজা’র শাসনের মতো – খামখেয়ালী, অনুমাননির্ভর, আর হ্যাঁ-মানুষে ঘেরা এক পরিবেশ।
ডেমোক্র্যাটিক কৌশলবিদ কার্ট বারডেলা বলেন, “একটা গলফ রিসোর্টে বা টাক্সেডো পরে বলরুমে দুঃসহ সিদ্ধান্ত নেয়ার আহ্বান জানানো—মানুষের বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন এক নেতার প্রতিচ্ছবি। এতে বোঝা যায়, এই মানুষটা হয় বেহুঁশ, নয়তো সমাজবিরোধী স্বার্থপর।”
এপ্রিলের ২ তারিখকে ‘মুক্তি দিবস’ ঘোষণা দিয়ে হোয়াইট হাউজের রোজ গার্ডেনে দাঁড়িয়ে ট্রাম্প ঘোষণা করেন নতুন শুল্ক নীতিমালা, যা বহুদিনের বিশ্ব বাণিজ্য কাঠামোকে ওলটপালট করে দেয়। অথচ সেই পরিকল্পনাটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেন অনুষ্ঠানের মাত্র তিন ঘণ্টা আগে!
একদিকে অর্থনৈতিক অস্থিরতায় বাজারে ট্রিলিয়ন ডলারের ক্ষতি, অন্যদিকে ট্রাম্প ছুটে গেলেন ফ্লোরিডার ডোরাল রিসোর্টে, সৌদি অর্থায়নে আয়োজিত গলফ প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে। সেখানে ছেলে এরিক ট্রাম্পের চালানো গলফ কার্টে ঘুরে বেড়ালেন।
একই সময়ে লিথুয়ানিয়ায় নিহত চার মার্কিন সেনার মরদেহ দেশে ফিরছে, ট্রাম্প ছিলেন মার-আ-লাগো ক্লাবে, এক মিলিয়ন ডলার মূল্যের রাজকীয় ডিনারে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে পাঠিয়ে দেন ডোভার বিমানঘাঁটিতে, যেন তিনিই যথেষ্ট প্রতিনিধি!
এক পর্যায়ে প্রেসিডেন্ট গর্ব করে ঘোষণা দেন, “আমি জানি আমি কী করছি”, এবং দাবি করেন, “দেশগুলো আমাদের সাথে চুক্তি করতে মরিয়া, আমার পেছনে ঘুরছে।” তবে সেই ঔদ্ধত্যের পরদিনই তিনি নতি স্বীকার করেন—চীনের উপর শুল্ক বাড়ালেও অন্য দেশগুলোর ক্ষেত্রে ৯০ দিনের জন্য বিরতি দেবেন বলে জানান।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক ল্যারি সাবাতো বলেন, “মেরি আন্তোয়ানেতের মতো অবস্থা—জনগণ না খেয়ে মরছে, আর তিনি নিজের ক্লাবে নিজেই গলফ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আনন্দ করছেন। নিয়মকানুন তাদের জন্য নয়।”
নিউ ইয়র্ক টাইমসের কলামিস্ট মাওরিন ডাউড বলেন, “ট্রাম্প শেক্সপিয়ারের ‘রিচার্ড থার্ড’-এর মতো—খলনায়ক, কিন্তু এমনভাবে বলেন যে তা হাস্যরসের আড়ালে ঢাকা পড়ে যায়।”
সবশেষে ট্রাম্পের আচরণ যেন প্রতীয়মান করে যে, বাস্তবতা থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, ব্যঙ্গ-রস আর ক্ষমতার মোহে আচ্ছন্ন এক রাজা নিজের রাজত্ব চালিয়ে যাচ্ছেন—দুনিয়া যতই পুড়ুক না কেন।