
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত ট্যারিফ আরোপের ঘোষণা দেওয়ার পরই কৌশল বদলেছে বেইজিং। বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এখন অর্থনৈতিক ধাক্কা সামলাতে দ্রুত প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে তৎপর হয়ে উঠেছে।
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আগামী সপ্তাহে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার তিনটি গুরুত্বপূর্ণ দেশ—ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফরে যাচ্ছেন। এই সফরের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও গভীর করা এবং ট্রাম্পের ট্যারিফ যুদ্ধের বিরুদ্ধে আঞ্চলিক সমর্থন ও সহযোগিতা অর্জন।
সম্প্রতি চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিবেশী কূটনীতি নিয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলনের আয়োজন করে। সেখানে জানানো হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে এখন থেকে চীনের কূটনীতির “অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এলাকা” হিসেবে বিবেচনা করা হবে। প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই অঞ্চলটি “মানবজাতির জন্য ভাগ করা ভবিষ্যতের” সম্প্রদায় গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
টেম্পল ইউনিভার্সিটি জাপানের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক বেনোয়া হার্ডি-শারট্র্যান্ড বলেন, “দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া চীনের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের সংযোগস্থলে অবস্থিত, পাশাপাশি বিশ্ব বাণিজ্যের গুরুত্বপূর্ণ পথগুলোর কাছাকাছি।” তবে তিনি সতর্ক করে জানান, ভিয়েতনাম ও ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো চীনের ওপর এখনো সন্দিহান। দ্বিপাক্ষিক নিরাপত্তা ইস্যু সমাধান না হলে এসব দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক পুরোপুরি বিকশিত হবে না।
🔶 ভারতের দিকেও নজর বেইজিংয়ের
শুধু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া নয়, প্রতিবেশী ভারতের প্রতিও মনোযোগী হচ্ছে চীন। ২০২৫ অর্থবছরে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতি রেকর্ড $১০০ বিলিয়নে পৌঁছালে চীন তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং ভারত থেকে আমদানি বাড়ানোর ইচ্ছা প্রকাশ করে।
হিন্দুস্তান টাইমস-এর খবরে জানা যায়, চীন বেশ কিছু ভারতীয় পণ্যের ওপর ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ বাধা সরিয়ে দিতে পারে। এ ছাড়া চীনা ব্যবসার জন্য ভারত যাতে আবারও উন্মুক্ত হয়, সে লক্ষ্যে বেশি ব্যবসায়িক ভিসা, সরাসরি বিমান সংযোগ ও বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যবসা পরিবেশ তৈরির অনুরোধ জানানো হয়েছে।
২০২০ সালে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখায় (LAC) ভারত-চীন সামরিক উত্তেজনার পর ভারত চীনা বিনিয়োগে রাশ টানে এবং একাধিক চীনা অ্যাপ নিষিদ্ধ করে। তবে গত বছরের অক্টোবরে সেনা প্রত্যাহার ও উচ্চ পর্যায়ের আলোচনার পর দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে।
চীনের এই নতুন কূটনৈতিক কৌশল স্পষ্ট করে দিচ্ছে, ট্রাম্পের ট্যারিফ যুদ্ধের মুখে পড়েও বেইজিং অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে একা হতে চায় না। বরং তারা প্রতিবেশীদের সাথে ঘনিষ্ঠতা বাড়িয়ে আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিজেদের অবস্থান শক্ত করতে চায়।