
আজ ১১/১১ সিঙ্গেলদের দিন যেভাবে পরিণত হলো কেনাকাটা
সিঙ্গেলরা নিজের ব্যাপারে ফোকাস করতে পারেন এবং নিজের মতো চলতে পারেন। সিঙ্গেল বা সম্পর্কে না থাকা ব্যক্তিরা আজকের দিনে মনমতো শপিং করতে পারেন। প্রতিবছর নভেম্বরের ১১ তারিখ ‘সিঙ্গেলস ডে’ উদযাপিত হয়। ডেটিং অ্যাপ আর ম্যাট্রিমোনিয়াল সাইটগুলোর পসারের এই যুগেও যারা একা থাকাকে চুটিয়ে উপভোগ করছেন আজকের দিবসটি তাদের জন্যই।
ডেজ অব দ্য ইয়ারের তথ্যমতে, এই দিবসের গোড়াপত্তন চীন থেকে। নব্বইয়ের দশকে দেশটির নানজিং বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল ‘সিঙ্গেল’ শিক্ষার্থী নিজেদের নিঃসঙ্গতাকে উদযাপনের জন্য দিনটির প্রচলন করেন।
এ দিনকে প্রকাশ করা হয়, চারটি ‘১’ এর মাধ্যমে, অর্থাৎ ১১.১১। দিনটিকে উপভোগের জন্য এদিন সিঙ্গেল বা সম্পর্কে না থাকা ব্যক্তিরা শপিং করতে পারেন, প্রিয় রেস্তরাঁতে নিজেকে ট্রিট দিতে পারেন কিংবা সৌন্দর্যচর্চাকেন্দ্রে নিজের যত্নে সময় ব্যয় করতে পারেন।
চীনে ইতিমধ্যে এই দিনটি কেনাকাটা করার অন্যতম বড় দিনে পরিণত হয়েছে, যার রেশ ছড়িয়েছে আমাদের দেশেও! প্রতিবছরের মতো এবারও আজকের দিনে বিভিন্ন অনলাইন ও অফলাইন শপগুলোতে চলছে ‘১১.১১ ছাড়’। শুধু সিঙ্গেলই নয়, সব ধরনের ক্রেতারা রীতিমতো হুমড়ি খেয়ে নিজেদের জন্য কেনাকাটায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন! শুধু কেনাকাটার জন্যই নয়, সিঙ্গেল থাকা মানুষেরা কিন্তু জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রেই ঈর্ষণীয় কিছু সুবিধা উপভোগ করে থাকেন। ‘সিঙ্গেলস ডে’ তে জেনে নিন তাঁরই কিছু-
নিজের সব সিদ্ধান্ত নিজে নেওয়া
সিঙ্গেলরা যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন। সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাঁদের অন্য কারও পানে চেয়ে থাকতে হয় না। ক্লাস শেষে বিকালে তিনি কি কোনো আড্ডায় যোগ দেবেন নাকি বাড়ি গিয়ে নেটফ্লিক্সের সিরিজে ডুবে থাকবেন, সে সিদ্ধান্ত একান্তই তাঁর।
ইচ্ছামত ঘোরা যায়
সিঙ্গেল মানুষ নিজের ইচ্ছামত ঘোরাফেরা করতে পারেন। ‘ওখানে কেন গেলে, আমাকে নিয়ে গেলে না কেন, কার সঙ্গে দেখা হলো’-এমন প্রশ্নের ফিরিস্তি তাঁদের দিতে হয় না। ভালোবাসার মানুষ থাকলে এসব নিয়ে জটিলতা তৈরি হতো।
নিজেকে হারিয়ে না ফেলা
আপনার প্রিয় শখ ছবি আঁকা বা গান শোনা, কিন্তু সঙ্গী চান আপনি অবসর সময়ে আইইএলটিএসের প্রস্তুতিতে নিয়োজিত থাকুন। সিঙ্গেল হলে কিন্তু এই দোটানায় আপনাকে পড়তে হবে না। কারণ, তাদের নিজেদের ইচ্ছামত ‘হবি’ বা শখ পূরণের সুযোগ থাকে। সঙ্গীকে মুগ্ধ করতে গিয়ে নিজেকে হারিয়ে ফেলার বা সৃষ্টিশীল কাজ থেকে দূরে সরে যাওয়ার ভয় থাকে না।
নিজের লক্ষ্যে অবিচল থাকা
আপনার লেখালেখি ভালো লাগে। কিন্তু প্রেমিক বা প্রেমিকার দাবি, তাঁর পরিবারের খাতিরে আপনাকে করতে হবে সরকারি চাকরি। এমন পিছুটানে শেষ পর্যন্ত আপনার নিজের স্বপ্নই অধরা থেকে যাবে। সম্পর্কে না থাকা মানুষেরা তাই নিজেদের লক্ষ্যে অবিচল থাকার সুবিধা পেয়ে থাকেন।
নেটওয়ার্কিং ভালো হয়
সামাজিকতা বা যোগাযোগ অর্থে আজকাল তরুণেরা ‘নেটওয়ার্কিং’ শব্দটি অনেক ব্যবহার করে থাকে। সিঙ্গেলরা নেটওয়ার্কিংয়ের অধিক সুযোগ পেয়ে থাকেন, যা দীর্ঘমেয়াদে তাঁদের ব্যক্তিজীবন, ক্যারিয়ার ইত্যাদিতে সুফল আনে। কারণ, দিনশেষে তাঁদের কারও কাছে জবাবদিহি করতে হয় না যে ‘অমুকের সঙ্গে কেন মিশছ, তমুক প্রতিষ্ঠানে কেন গিয়েছ’ ইত্যাদি। এমন চাপের কারণেই বোধহয় আশেপাশের অনেককে দেখবেন সম্পর্কে যাওয়ার পর সবকিছু থেকে কেমন যেন ‘গায়েব’ হয়ে গেছেন।
খরচ কম
সিঙ্গেলরা বিবাহিতদের তুলনায় আর্থিকভাবে চাপমুক্ত থাকেন। প্রেম করলে বাইরে খাওয়া, সিনেমা দেখা, ঘোরাফেরা, কেনাকাটা ইত্যাদির খরচ যোগ হবে। আর সেটা দু’পক্ষের ক্ষেত্রেই। তাছাড়া সম্পর্কে থাকা মানে একটা দায়িত্ববোধ ঘাড়ে এসে পড়া। অনেক সময় এই দায়িত্ববোধ ব্যক্তির ঝুঁকি নেওয়ার সাহস কেড়ে নেয়।
নিজেকে অগ্রাধিকার দেওয়া
সিঙ্গেলরা নিজের ব্যাপারে ফোকাস করতে পারেন এবং নিজের মতো চলতে পারেন। যেমন- নিজের পরীক্ষার পড়া রেখে সঙ্গীর এসাইনমেন্ট তৈরিতে সময় ব্যয় করতে হয় না তাদের। নিজের জন্য বাড়তি সময় পাওয়ায় তিনি শরীরচর্চায় ব্যস্ত হতে পারেন। ফলে স্বাস্থ্যও ভালো থাকে।
ঘুম ভালো হয়
আজকাল সোশ্যাল মিডিয়া যেকোনো সম্পর্কে বড় প্রভাব রাখে। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রামে সঙ্গীকে নজরদারির একটা প্রবণতা এসময় সবার মধ্যেই কম-বেশি দেখা যায়। সঙ্গী কোন ছবি আপলোড দিল, কার ছবিতে লাইক-কমেন্ট করলো, রাতে কতক্ষণ অনলাইন থাকল এসব নিয়ে নানা অপ্রীতিকর অবস্থার সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, যে সিঙ্গেল তাঁর এমন কোনো ব্যাপারে মাথা ঘামাতে হয় না। তাঁর মেজাজ ভালো থাকে এবং ঘুমটা শান্তির হয়।