
গাজায় চলমান রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের অবসানে একটি নতুন প্রস্তাবের প্রতি ইসরায়েল ও হামাস উভয়েই প্রাথমিক সম্মতি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এই সপ্তাহের শুরুতে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ বন্ধে একটি চুক্তি এবং হামাসের হাতে বন্দি থাকা অধিক সংখ্যক জিম্মির মুক্তির ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট সাংবাদিকদের বলেন, ইসরায়েল “এই নতুন প্রস্তাবকে সমর্থন ও অনুমোদন করেছে।”
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের নেতৃত্বে একটি শান্তিচুক্তির খসড়া তৈরি করা হয়, যা ইসরায়েল ইতোমধ্যে অনুমোদন করেছে। হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি ক্যারোলাইন লেভিট বলেন, “ইসরায়েল এই নতুন প্রস্তাবকে সমর্থন ও অনুমোদন করেছে।” এই খসড়ার মাধ্যমে একটি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে।
হামাসের সংরক্ষিত প্রতিক্রিয়া
হামাস এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে প্রস্তাবটি গ্রহণ করেনি, তবে তারা বলেছে যে এটি তারা “জাতীয় দায়িত্ববোধের” সঙ্গে পর্যালোচনা করছে। হামাস নেতা বাসেম নাইম বলেন, “এই তথাকথিত জায়নিস্ট প্রতিক্রিয়া মূলত দখল বজায় রাখা এবং হত্যা ও দুর্ভিক্ষ চালিয়ে যাওয়ার নামান্তর।” তবে তিনি এটিও যোগ করেন যে, প্রস্তাবটি গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখা হবে।
যুদ্ধবিরতির সম্ভাব্য শর্তাবলি
গোপন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রস্তাবিত চুক্তিতে রয়েছে—
৬০ দিনের যুদ্ধবিরতি, যার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী শান্তি আলোচনা চলবে।
জিম্মি মুক্তি: হামাস ১০ জন জীবিত জিম্মি এবং কিছু মৃতদেহ ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করবে; বিনিময়ে ইসরায়েল ১,১০০’র বেশি ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে।
মানবিক সহায়তা: প্রতিদিন শত শত ট্রাক খাদ্য ও ওষুধ গাজায় প্রবেশ করবে।
সেনা প্রত্যাহার: ইসরায়েলি বাহিনী মার্চে যুদ্ধবিরতির আগে যেখানে ছিল, সেই অবস্থানে ফিরে যাবে।
দুই পক্ষের মূল অবস্থান
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, “সব জিম্মি মুক্ত না হওয়া এবং হামাস ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত যুদ্ধ চলবে।” তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল গাজার ওপর দীর্ঘমেয়াদে নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখবে।
অন্যদিকে, হামাসের দাবি— ইসরায়েলকে গাজা থেকে সম্পূর্ণ সরে যেতে হবে, যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে এবং আরও ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দিতে হবে। তারা গাজার প্রশাসন একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি প্রতিনিধিত্বশীল কমিটির হাতে হস্তান্তরেরও প্রস্তাব দিয়েছে।
মানবিক বিপর্যয় ও যুদ্ধের বাস্তবতা
৭ অক্টোবর ২০২৩-এ হামাসের আক্রমণে ১,২০০ জন ইসরায়েলি নিহত ও ২৫১ জন জিম্মি হয়।
পাল্টা অভিযানে ইসরায়েলি হামলায় ৫৪,০০০’র বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
গাজা আজ ধ্বংসপ্রায়; ২০ লাখ মানুষের ৯০ শতাংশই বাস্তুচ্যুত।
শান্তিপ্রক্রিয়ার ভবিষ্যৎ
বহু বিশ্লেষক মনে করছেন, বর্তমান প্রস্তাব যুদ্ধবিরতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ হলেও এটি চূড়ান্ত শান্তি নয়। নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক চাপ, হামাসের সামরিক দুর্বলতা, এবং ফিলিস্তিনিদের বিভাজন একটি দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথে বড় বাধা।
২০০৯ সালের পর কার্যকর কোনো শান্তি আলোচনা হয়নি। এবার যদি ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির মধ্যে কূটনৈতিক অগ্রগতি না আসে, তাহলে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।