
ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয় করেছে প্যারিস সেন্ট জার্মেইন (PSG)। মিউনিখে অনুষ্ঠিত ফাইনালে ইন্টার মিলানকে ৫-০ গোলে পরাজিত করার পর দেশজুড়ে উদযাপন শুরু হলেও, তা রূপ নেয় সহিংসতায়। ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় রোববার জানিয়েছে, উদযাপনের মধ্যে দুইজন নিহত হয়েছেন এবং সারা দেশে ৫৫৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
উল্লাসের কেন্দ্রবিন্দু ছিল প্যারিস, যেখানে গাড়ির হর্ন, রাস্তার গান, উল্লাসধ্বনি ও আতশবাজির আওয়াজে রাতভর মুখরিত ছিল শহর। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে PSG-এর ৫-০ গোলের জয় উদযাপন করতে হাজার হাজার মানুষ চ্যাম্পস-এলিজি অ্যাভিনিউতে জড়ো হন।
সেখানে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে কিছু জনতা। রাজধানী প্যারিসেই ৪৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, মূলত অবৈধ আতশবাজি বহন ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে।
উদযাপনের মধ্যে দুটি মৃত্যু
প্যারিসের ১৫তম অ্যারোন্ডিসমেন্টে একটি মোটর স্কুটার চালক গাড়ির ধাক্কায় নিহত হন। ঘটনাস্থলটি চ্যাম্পস-এলিজি থেকে মাত্র কয়েক কিলোমিটার দূরে।
দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ড্যাক্সে PSG জয় উদযাপনের একটি সমাবেশে ১৭ বছর বয়সী এক কিশোরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়। যদিও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হত্যাকাণ্ডটি সরাসরি চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিনা তা এখনো স্পষ্ট নয়। ঘটনার পর সন্দেহভাজন ব্যক্তি পলাতক রয়েছে।
অন্যত্র সংঘর্ষ ও দুর্ঘটনা
গ্রেনোবলে PSG ভক্তদের মধ্যে গাড়ি ঢুকে পড়লে একই পরিবারের চারজন আহত হন, যাদের মধ্যে দুজনের অবস্থা গুরুতর। গাড়িচালক নিজেই থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন এবং তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, চালক ইচ্ছাকৃতভাবে এ কাজ করেননি এবং তার শরীরে অ্যালকোহল বা মাদকের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
চ্যাম্পস-এলিজিতে পুলিশের জলকামান ব্যবহার করে জনতাকে আর্ক দে ট্রায়ঁফ এর দিকে যাওয়া থেকে বাধা দিতে দেখা যায়। পুলিশ জানিয়েছে, “দাঙ্গাবাজরা বড় আতশবাজি ও বিভিন্ন বস্তু ছুঁড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করছিল।”
PSG-এর হোম স্টেডিয়াম পার্ক দে প্রিন্সেও বিশাল স্ক্রিনে খেলা দেখা শেষে ভক্তদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা যায়, যেখানে ৪৮ হাজার মানুষ একত্রিত হয়েছিল।
আনন্দ ও আবেগে ভরা সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া
একজন ২০ বছর বয়সী PSG সমর্থক ক্লেমঁ বলেন, “এটা অসাধারণ এবং পুরোপুরি প্রাপ্য। আমাদের একটি গান আছে যেখানে আমাদের সংগ্রামের কথা বলা হয়েছে—সব সময় সহজ ছিল না।”
তিনি আরও বলেন, “এবার আমাদের বিশ্বাস ফিরে এসেছে। এই দলটায় কোনো তারকা নেই, সবাই একে অপরের জন্য খেলেছে।”
রেকর্ড দর্শকসংখ্যা
ম্যাচটি ফ্রান্সজুড়ে ১ কোটি ১৫ লাখ মানুষ টেলিভিশনে দেখেছেন বলে জানিয়েছে মিডিয়ামেট্রি ও সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠান Canal+।
এই জয় PSG-এর ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ইউরোপীয়ান ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে বড় ট্রফি এনে দিল।