
প্রেসিডেন্ট পুতিন শান্তির নামে আসলে নতুন যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন— এমনই কড়া অভিযোগ তুলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দুই শীর্ষ সিনেটর। তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, পুতিন যদি এখনই থামানো না যায়, তবে ইউক্রেন যুদ্ধ ভয়াবহ মোড় নিতে পারে এবং এই যুদ্ধ ভবিষ্যতে আমেরিকাকেও সামরিকভাবে জড়িয়ে ফেলতে পারে।
প্যারিসে অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের সঙ্গে কথা বলেন রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম এবং ডেমোক্র্যাট সিনেটর রিচার্ড ব্লুমেনথাল। এর আগে তারা ইউক্রেন সফর করে যুদ্ধবিধ্বস্ত অঞ্চল পরিদর্শন করেন এবং প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে বৈঠক করেন।
ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ঐক্য
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর সঙ্গে বৈঠকের পর তারা জানান, ম্যাক্রোঁ তাদের যুদ্ধসংক্রান্ত মূল্যায়নের সঙ্গে “১০০% একমত”। দুই সিনেটরের মতে, রাশিয়ার সম্ভাব্য নতুন আক্রমণ ঠেকাতে এখনই সিদ্ধান্তমূলক পদক্ষেপ না নিলে দেরি হয়ে যাবে।
তাদের প্রস্তাবিত নতুন নিষেধাজ্ঞা বিলটিকে বলা হচ্ছে সেনেট ইতিহাসের ‘সবচেয়ে কঠিন ও কঠোর’ পদক্ষেপ। এই বিলে রাশিয়ার জ্বালানি (তেল, গ্যাস, ইউরেনিয়াম) আমদানিকারকদের ওপর ৫০০% শুল্ক আরোপের প্রস্তাব রয়েছে। এতে প্রধান লক্ষ্য চীন ও ভারত— যারা রাশিয়ার জ্বালানি রপ্তানির ৭০% কিনছে এবং যুদ্ধ-অর্থনীতির বড় সহায়ক।
গ্রাহাম বলেন, “এই বিল পুতিনের যুদ্ধ অর্থনীতি ধ্বংসের জন্য আমাদের শেষ সুযোগ হতে পারে।”
ব্লুমেনথাল যোগ করেন, “এই নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে একটি বাণিজ্য বিচ্ছিন্ন দ্বীপে পরিণত করবে।”
দুই সিনেটর জানান, ইউক্রেন যুদ্ধের নিরপেক্ষ সমাধানের পথে নয়, পুতিন গ্রীষ্ম কিংবা শরতের শুরুতে নতুন হামলার পরিকল্পনা করছেন। গ্রাহাম বলেন, “আমরা বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ পেয়েছি, পুতিন নতুন হামলা চালাতে চলেছেন।”
ইস্তানবুলে সোমবার শান্তি আলোচনা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ইউক্রেন বলছে, মস্কো কোনো বাস্তবসম্মত প্রস্তাব দিচ্ছে না। ব্লুমেনথালের ভাষায়, “পুতিন সময়ক্ষেপণ করছেন যাতে ইউক্রেনের নতুন অঞ্চল দখল করা যায়।”
ব্লুমেনথাল সরাসরি বলেন, “পুতিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে খেলাচ্ছেন।”
তিনি দাবি করেন, পুতিন কৌশলে ট্রাম্পকে ব্যবহার করছেন যুদ্ধ চালিয়ে যেতে। যদিও ট্রাম্প এখনো বিলটিকে সমর্থন দেননি, তবে গ্রাহাম জানান, এটি ট্রাম্পের উপদেষ্টাদের সঙ্গে আলোচনা করেই তৈরি হয়েছে।
দুই সিনেটর ইউক্রেনে মানবিক বিপর্যয়ের কথা তুলে ধরেন। গ্রাহাম বলেন, “২০,০০০ শিশু জোরপূর্বক রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে — এটি কূটনৈতিক নয়, ন্যায়বিচারের প্রশ্ন।”
ব্লুমেনথাল বুচায় গণহত্যার প্রসঙ্গ তুলে বলেন, “পুতিন একজন খুনি, একজন গুন্ডা।”
নেটোর সংঘাতে জড়ানোর শঙ্কা
ব্লুমেনথাল বলেন, এখন ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে আমেরিকান সেনাদেরও যুদ্ধ করতে হতে পারে। “পুতিন যদি ইউক্রেনে থামানো না যায়, তাহলে একদিন নেটোর ধারা অনুযায়ী আমেরিকা বাধ্য হবে সামরিকভাবে জড়াতে।”
ইউরোপের ঐক্য ও ট্রাম্পের পরীক্ষার সময়
ম্যাক্রোঁর সঙ্গে ঘন্টাব্যাপী বৈঠকের পর দুই সিনেটর জানান, ইউরোপ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ। ব্লুমেনথাল বলেন, “ম্যাক্রোঁ ১০০% আমাদের বার্তার সঙ্গে একমত।”
এই নিষেধাজ্ঞা বিল সেনেটে বিরল দলমতনিরপেক্ষ সমর্থন পেয়েছে — ৪১ জন রিপাবলিকান ও ৪১ জন ডেমোক্র্যাট এর পক্ষে।
গ্রাহাম বলেন, “প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেছেন, আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই বোঝা যাবে, পুতিন তাঁকে ঘুরপথে চালাচ্ছেন কিনা। রাশিয়া হয়তো সোমবারই তার ইঙ্গিত দেবে।”