
যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা সচিব পিট হেগসেথ শনিবার ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে আমেরিকার মিত্রদের আশ্বস্ত করে বলেছেন, চীনের ক্রমবর্ধমান সামরিক ও অর্থনৈতিক চাপের মুখে তারা কখনো একা পড়বে না। সিঙ্গাপুরে শাংগ্রি-লা ডায়ালগ নিরাপত্তা সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তিনি।
হেগসেথ বলেন, “চীনের সেনাবাহিনী এখন বাস্তব যুদ্ধের অনুশীলন করছে। আমরা এটি আড়াল করব না—এই হুমকি বাস্তব এবং তা যেকোনো সময় রূপ নিতে পারে।” বিশেষ করে তাইওয়ানকে ঘিরে বেইজিংয়ের সামরিক তৎপরতাকে পেন্টাগন তাৎক্ষণিক হুমকি হিসেবে দেখছে।
তিনি হুঁশিয়ারি দেন, “চীন এখন শুধু প্রস্তুতি নিচ্ছে না, তারা প্রতিদিন তাইওয়ান দখলের প্রশিক্ষণ চালাচ্ছে।” তিনি মনে করেন, তাইওয়ান অবরোধের জন্য চীনের সামরিক মহড়া ‘একটি লক্ষ্যভিত্তিক পরিকল্পনার অংশ।’
চীনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া
চীনা প্রতিনিধি দলের প্রধান, রিয়ার অ্যাডমিরাল হু গাংফেং হেগসেথের বক্তব্যকে “ভিত্তিহীন অভিযোগ” বলে প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি বলেন, “অনেক দাবি মিথ্যা, কিছু তথ্য বিকৃত, আর কিছু চোরের মুখে ‘চোর চোর’ চিৎকার করার মতো আচরণ।”
চীন ২০২৭ সালের মধ্যে তাইওয়ান দখলের প্রস্তুতির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে। যদিও সামরিক বিশ্লেষকরা এটিকে একটি রাজনৈতিক আকাঙ্ক্ষা হিসেবে দেখছেন।
মহাকাশ ও গোল্ডেন ডোম
হেগসেথ জানান, চীনের হাইপারসনিক ও মহাকাশ প্রযুক্তির অগ্রগতির জবাবে যুক্তরাষ্ট্র একটি “গোল্ডেন ডোম” মহাকাশ-ভিত্তিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরির পথে রয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যেই ২৫ বিলিয়ন ডলারের বাজেট বরাদ্দ অনুমোদন করেছেন।
অর্থনীতি বনাম প্রতিরক্ষা
তিনি আরও সতর্ক করেন যে, চীনের অর্থনৈতিক নির্ভরতা একদিকে যেমন দেশগুলোকে চীনের প্রভাবে আনে, তেমনি প্রতিরক্ষা সিদ্ধান্তকে জটিল করে তোলে। ইন্দো-প্যাসিফিকের দেশগুলোর প্রতি হেগসেথ আহ্বান জানান, ইউরোপের মতো অন্তত GDP-র ৫% প্রতিরক্ষায় ব্যয় করতে।
ইউরোপীয় অবস্থান ও ভিন্নমত
ইইউ’র পররাষ্ট্র নীতিবিষয়ক প্রধান কায়া ক্যালাস বলেন, “চীনের সমর্থনে যদি রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া একত্র হয়, তাহলে ইউরোপ ও এশিয়ার নিরাপত্তা একে অপরের সঙ্গে জড়িত।” তিনি বলেন, ইউরোপ কেবল নিজেদের নিরাপত্তা দেখবে, এমন ধারণা বিপজ্জনক।
মিত্রদের কাছে বার্তা
হেগসেথ বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র একা সবকিছু করতে চায় না। আমাদের প্রকৃত কৌশলগত শক্তি আমাদের মিত্রদের শক্তিশালী নেটওয়ার্কে।” তিনি চীনের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ প্রতিরক্ষা গঠনের আহ্বান জানান।
অস্ট্রেলিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী রিচার্ড মার্লেস হেগসেথের অবস্থানকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া কোনো কার্যকর ভারসাম্য সম্ভব নয়।” তবে ট্রাম্প প্রশাসনের উচ্চ শুল্ক নীতিকে “অস্থিতিশীল” বলে মন্তব্য করেন তিনিও।
হেগসেথ উত্তর দেন, ইয়েমেনে হুতি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি ও যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে এই পদক্ষেপ প্রয়োজন ছিল।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতির ওপর আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে বলেই অনেকে আশঙ্কা করছেন।
হেগসেথ স্পষ্ট করে দেন, “যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনের জন্য কারও পশ্চিমা সংস্কৃতি বা জলবায়ু নীতির সঙ্গে সঙ্গতি খুঁজতে হবে না। আমরা ঐতিহ্যগত মিত্র ও নতুন অংশীদার—সবার জন্য উন্মুক্ত।”