
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ টাস্কফোর্স অপারেশনে সফলভাবে গ্রেফতার করা হয়েছে বহু বছরের খোঁজে থাকা শীর্ষ দুই পলাতক সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে। কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে এই গ্রেফতার কার্যকর হয়, যা দেশের ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
________________________________________
🔴 অভিযানের পেছনের কাহিনি
জানাযায় ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের অবসানের পর, দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ পাশ্ববর্তী দেশে পালিয়ে যায়। দীর্ঘ ১৬ বছরের শাসনামলে হাজার হাজার কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন করে তারা। এই অর্থ তারা ব্যবহার করতে শুরু করে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশৃঙ্খলা, অরাজকতা এবং টার্গেট কিলিংয়ের জন্য।
এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নে ব্যবহৃত হয় সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদের মতো দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসীদের, যাদের সহযোগিতায় কাজ করছিল পার্শ্ববর্তী দেশের গোয়েন্দা সংস্থা।
দেশপ্রেমিক বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, স্বতন্ত্র ৪৬ পদাতিক ডিভিশন, এবং ২৫ ইষ্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এর সমন্বয়ে গঠিত একটি বিশেষ টাস্কফোর্স দীর্ঘ ২ মাস নজরদারি, গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ ও পরিকল্পনার মাধ্যমে এই অভিযানে নামে।
________________________________________
🛡️ অভিযানের সাফল্য ও উদ্ধারকৃত তথ্য
কোনো রক্তপাত ছাড়াই গ্রেফতার করা হয় সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদকে। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়:
• স্যাটেলাইট ফোন
• অস্ত্র ও গোলাবারুদ
• গোয়েন্দা নথিপত্র
• সুব্রত বাইনের ছদ্মনামে ইস্যু করা বিশেষ পাসপোর্ট
তদন্তে জানা গেছে, তারা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, সাংবাদিক ও ছাত্রনেতাদের টার্গেট করেছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিল দেশে বড় ধরনের বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করে তোলা।
________________________________________
📄 বিশেষ পাসপোর্টের ভেতরের গোপন তথ্য
সুব্রত বাইন ২০০১ সালে “মোহাম্মদ আলী” নামে একটি বিশেষ বাংলাদেশি পাসপোর্ট গ্রহণ করে, যা কেবল ভারত-বাংলাদেশ যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হতো। এই পাসপোর্ট ব্যবহার করে তিনি:
• ২০০১ সালের ৮ অক্টোবর প্রথমবার ভারত প্রবেশ করেন
• ২০০৪ সালের জুন পর্যন্ত ৯ বার ভারতীয় ভিসা গ্রহণ
• মোট ৩২ বার সীমান্ত পারাপার করেন
প্রতিবার দেশে ঢুকে টার্গেট কিলিং করে আবার ভারতে পলায়ন করতেন। তার এই যাতায়াত ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতা করেছে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা RAW ও Military Intelligence (MI)।
________________________________________
🧾 নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ফিরিস্তি
তদন্তে জানা যায়, ২০০৩ সালে ঢাকায় এক হামলায় তিনি বম সম্প্রদায়ের এক নেতার স্ত্রী ও সন্তানকে হত্যা করেন। একই বছর মোহাম্মদপুর বিহারী ক্যাম্পে মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট (MQM) সংশ্লিষ্ট মোস্তাকিম নামক এক ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা করে। বহুবার ULFA নেতা পরেশ বড়ুয়ার হত্যাচেষ্টা চালায় সুব্রত, কিন্তু ব্যর্থ হয়।
🛂 ভারতীয় পাসপোর্টে নতুন পরিচয়
বাংলাদেশি পাসপোর্টে সর্বশেষ ২০০৪ সালের সেপ্টেম্বরে দেশে প্রবেশের পর আর কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি। কিন্তু ২০০৭ সালের ১৪ মে ভারতের পক্ষ থেকে সুব্রত বাইনকে “মোহাম্মদ আলী” নামে ভারতীয় পাসপোর্ট প্রদান করা হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর এই অপারেশন কেবল দুই শীর্ষ সন্ত্রাসীকে গ্রেফতার করেই শেষ হয়নি, বরং একটি বিশাল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রকে প্রতিহত করেছে।
এই অসাধারণ সাফল্যের জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, ৪৬ পদাতিক ডিভিশন ও দূর্জয় পঁচিশ এর প্রত্যেক সদস্যের প্রতি জাতি কৃতজ্ঞ। তাদের দেশপ্রেম, সাহস ও বুদ্ধিমত্তার ফলে বাংলাদেশ আজ এক ভয়াবহ বিপদ থেকে রক্ষা পেয়েছে।