
২০০৭ সালে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অনুরোধে ভারতে পলাতক সন্ত্রাসীদের ধরতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় অভিযান শুরু হয়। সেই সময় কোলকাতা সিআইডি-র উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রাজিব কুমার বহু প্রচেষ্টা করেও শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইনের নাগাল পেতে ব্যর্থ হন। কিন্তু সুব্রত বাইন, ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’-এর সহায়তায় নতুন পরিচয়ে “আলী মোহাম্মদ” নামে একটি ভারতীয় পাসপোর্ট সংগ্রহ করে কৌশলে গা-ঢাকা দেয়। এবিষয়ে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করেন আল-জাজিরার সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের।
২০০৯ সালের বিডিআরে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় তৎকালীন বিডিআর সদস্য এবং আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা তোরাব আলী ভারতের পাঁচটি মোবাইল নম্বরের সঙ্গে যোগাযোগে ছিলেন বলে তথ্য উঠে আসে। ধারণা করা হয়, এর মধ্যে একটি নম্বর ছিলো সুব্রত বাইনের। তোরাব আলীর ছেলে, কুখ্যাত লেদার লিটনের সঙ্গে সুব্রতের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিলো। সে সুব্রতের হয়ে বাংলাদেশে নানা ‘টার্গেট অ্যাসাইনমেন্ট’ বাস্তবায়নে সহায়তা করত। এই তথ্য বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সুব্রতের সম্পৃক্ততার সন্দেহকে আরও ঘনীভূত করে।
কিছুদিন পর কোলকাতা পুলিশের STF প্রধান রাজিব কুমারের সঙ্গে সুব্রতের দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। সুব্রত কৌশলে রাজিব কুমারের বিরুদ্ধে কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টে অভিযোগও দায়ের করে। যদিও রাজিব কুমার ছিলেন পুলিশ অফিসার, তথাপি তার সরাসরি সংযোগ ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা IB-এর সাথে। IB বনাম RAW এর অভ্যন্তরীণ প্রতিদ্বন্দ্বিতা এই দ্বন্দ্বকে আরও জটিল করে তোলে।
পালিয়ে যাওয়া ও নেপালি পরিচয়ে গোপন জীবন
২০০৯ সালের আগস্টে কোলকাতা নিরাপদ না মনে করে সুব্রত শিলিগুড়ি হয়ে গাড়ি চালিয়ে তার তৃতীয় স্ত্রী জামেনা বিবিকে নিয়ে নেপালে প্রবেশ করে। বিহারের এক সন্ত্রাসীর মাধ্যমে সে নকল নেপালি পাসপোর্ট ও পরিচয়পত্র তৈরি করে। অন্যদিকে, STF রাজিব কুমারের নেতৃত্বে সুব্রতের দমদম এলাকার বাড়ি থেকে লেদার লিটনকে গ্রেফতার করে এবং তার সূত্র ধরে সুব্রতের লোকেশন নিশ্চিত করে।
গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে STF যখন কাঁকড়ভিটা বাজারে সুব্রতকে গ্রেফতার করে, সে নিজেকে নেপালি পরিচয় দিয়ে চিৎকার করতে থাকে। এতে সাধারণ নেপালি জনগণ ও পুলিশ ভারতীয় STF সদস্যদের ওপর আক্রমণ করে বসে। পরে সুব্রতকে “পাবলিক নিউইসেন্স অফেন্স”-এ আটক করে ভদ্রপুর জেলে পাঠানো হয়।
ঝাপা জেলার পুলিশ সুপার সুব্রতকে ২১ দিনের রিমান্ডে নিয়ে শক্ত মামলা দায়ের করেন। কিন্তু সুব্রত কারাগারের ভেতরে বিহারী বন্দীদের সহায়তায় ৭৭ ফুট দীর্ঘ সুড়ঙ্গ খুঁড়ে এক রাতে ১১ জনসহ পালিয়ে যায়। তার স্ত্রী জামেনা প্রতিদিন ২০ জনের খাবার পাঠাতো জেলে। জেল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গড়ে তুলে এই ভয়াবহ পালানোর পরিকল্পনা সফল করে সুব্রত।
বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, নেপালের ওই জেলেই ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ এর গোপন মিশন ছিল। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো সুব্রতকে নেপালের নির্দিষ্ট কারাগারে ঢুকিয়ে সেখানে আটক ভারতীয়দের জেল থেকে বের করে আনা। এই পরিকল্পনা সফল হয়। এরপর একদিন হঠাৎ STF কোলকাতার বালিগঞ্জের একটি বাড়ি থেকে সুব্রতকে ফের গ্রেফতার করে প্রেসিডেন্সি জেলে পাঠায়।
কারাগারে পাঠানোর পর সুব্রতের সঙ্গে রাজিব কুমারের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়। তিনি সুব্রতকে বিভিন্ন সুবিধা প্রদান করতে শুরু করেন, যার মধ্যে ছিল বিশেষ খাবার, যোগাযোগের সুযোগ এবং বন্দীদের মধ্যে আধিপত্য বজায় রাখার ক্ষমতা।