
উত্তর গাজার গভর্নরেটে চিকিৎসাসেবার শেষ আশ্রয়স্থল আল-আওয়দা হাসপাতাল অবশেষে বন্ধ হয়ে গেল। হাসপাতালটির পরিচালক ড. মোহাম্মদ সালহা নিশ্চিত করেছেন, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর অবিলম্বে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশের পর এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
“দুই সপ্তাহের অবরোধের পর রোগীদের সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এখন উত্তর গাজায় আর কার্যকর কোনো হাসপাতাল নেই,” বিবিসিকে জানান ড. সালহা।
হাসপাতাল খালি করার নির্দেশ আসে বৃহস্পতিবার দুপুরে, যখন ইসরায়েলি বাহিনী প্রচণ্ড গোলাবর্ষণ ও ট্যাংক হামলা চালাচ্ছিল। ড. সালহা শুরুতে আংশিক সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তা প্রত্যাখ্যান করে ইসরায়েলি বাহিনী।
সন্ধ্যা সাড়ে ৮টার দিকে ৭ ঘণ্টার আলোচনার পর কর্মীরা ধ্বংসপ্রাপ্ত রাস্তায় রোগীদের ৩০০ মিটার দূরে অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত বহন করে নিয়ে যান। বিবিসিকে পাঠানো ভিডিওতে দেখা যায়, সূর্যাস্তের সময় রোগীরা অ্যাম্বুলেন্স ও ট্রাকে উঠছে এবং দক্ষিণ জাবালিয়ার দিকে অগ্রসর হচ্ছে।
রোগীদের গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতাল ও একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। ড. সালহা জানান, নতুন একটি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আশ্রয়স্থলে গঠন করা হতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গেব্রিয়েসুস জানান, আল-আওয়দা বন্ধ হওয়ায় উত্তর গাজায় আর কোনো কার্যকর হাসপাতাল নেই, যা হাজারো মানুষের জন্য ছিল একমাত্র জীবনরেখা।
“হাসপাতাল কখনোই লক্ষ্যবস্তু হওয়া উচিত নয়। নাগরিক ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।”
হামলা ও অবরোধের ইতিহাস
আল-আওয়দা হাসপাতালে অক্টোবর ২০২৩ থেকে অন্তত ২৮ বার হামলা হয়েছে, এবং এটি চতুর্থবারের মতো অবরোধের মুখে পড়েছে। সর্বশেষ হামলায় জরুরি বিভাগে চারজন কর্মী আহত হন, পানিশোধন প্ল্যান্ট ও ওষুধ গুদাম ধ্বংস হয়ে যায়।
গাজার স্বাস্থ্যব্যবস্থা বিপর্যস্ত
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় ১৫৮টি প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ৬১টি আংশিক বা পুরোপুরি চালু আছে। UNRWA-এর ২৭টি কেন্দ্রের মধ্যে ৯টি কার্যকর থাকলেও উত্তর গাজায় কতগুলো সক্রিয়—সে বিষয়ে নিশ্চিত কিছু জানা যায়নি।
সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির আলোচনা
এই ঘটনার মধ্যেই একটি সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছে। হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ইসরায়েল একটি মার্কিন প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে, যা হামাস “গভীরভাবে পর্যালোচনা” করছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “চুক্তি খুব সন্নিকটে।” তবে হামাস বলেছে, প্রস্তাবে তাদের মূল দাবি—ইসরায়েলের যুদ্ধ বন্ধের প্রতিশ্রুতি—রাখা হয়নি।
প্রস্তাবে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির পাশাপাশি ১,০০০+ ফিলিস্তিনি বন্দি মুক্তি এবং প্রথম সপ্তাহে হামাসের ২৮ জন জিম্মি মুক্তির শর্ত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
ইসরায়েল প্রায় তিন মাস পর সীমিত সাহায্য ঢুকতে দিয়েছে। কিন্তু খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের চরম সংকট এখনো রয়ে গেছে।
জাতিসংঘ ও সহযোগী সংস্থাগুলো জানিয়েছে, গাজায় ২১ লাখ মানুষের মধ্যে ব্যাপক অনাহার চলছে। গাজার মানবিক পরিস্থিতিকে তারা “বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষুধার্ত” হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
জাতিসংঘের মানবিক প্রধান টম ফ্লেচার বলেন, “গাজার জনগণকে জোরপূর্বক অনাহারে রাখা হচ্ছে।”
আন্তর্জাতিক চাপ বাড়ছে
ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, যদি ইসরায়েল সাহায্যপ্রবাহে সহায়তা না করে, তবে আন্তর্জাতিক অবস্থান “আরও কঠোর” হবে।