
মো: মোয়াজ্জেম হোসেন, বিশেষ প্রতিবেদক
বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে অপরিশোধিত তেল উৎপাদন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওপেক (OPEC) ও এর সহযোগী আটটি দেশ। আগামী আগস্ট মাস থেকে প্রতিদিন বাড়তি ৫ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল তেল উৎপাদন করবে বিশ্বের সবচেয়ে বড় তেল উৎপাদনকারী এই জোট।
গত শনিবার সকালে ভার্চ্যুয়াল বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ওপেক ও এর মিত্র দেশগুলো, যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া, সৌদি আরব, আলজেরিয়া, ইরাক, কাজাখস্তান, কুয়েত, ওমান এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। ওপেক সচিবালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বর্তমান বৈশ্বিক বাজার পরিস্থিতি এবং সুস্থ সরবরাহ–চাহিদার ভারসাম্য বজায় রাখতেই এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
এর আগে ধারণা করা হয়েছিল, এই বৈঠকে ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বৃদ্ধির ঘোষণা আসবে। তবে বৈঠকে তার চেয়েও বেশি, অর্থাৎ ৫ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেল বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
সিএনবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওপেক জোট স্বেচ্ছামূলকভাবে দুটি ধাপে উৎপাদন কমানোর নীতি চালু করেছিল।
প্রথমত, প্রতিদিন ১৬ লাখ ৬০ হাজার ব্যারেল কম উৎপাদনের সিদ্ধান্ত ছিল, যা ২০২৫ সালের শেষ পর্যন্ত চালু থাকার কথা।
দ্বিতীয়ত, প্রথম ত্রৈমাসিক পর্যন্ত অতিরিক্ত ২২ লাখ ব্যারেল দৈনিক উৎপাদন হ্রাস ছিল নির্ধারিত।
এর বিপরীতে, জোটভুক্ত দেশগুলো ২০২৬ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রতি মাসে ১ লাখ ৩৭ হাজার ব্যারেল উৎপাদন বাড়ানোর পরিকল্পনা নেয়। যদিও শুধু এপ্রিলে এই গতি বজায় রাখতে পেরেছিল তারা। এরপর মে, জুন ও জুলাইয়ে উৎপাদন এক ধাক্কায় তিনগুণ বেড়ে দাঁড়ায় ৪ লাখ ১১ হাজার ব্যারেলে। সর্বশেষ বৈঠকে তা আরও বাড়িয়ে ৫ লাখ ৪৮ হাজার ব্যারেলে উন্নীত করার সিদ্ধান্ত এসেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, চলতি বছরের গ্রীষ্মকালীন চাহিদা এবং ইরান–ইসরায়েল সংঘাত বিশ্ববাজারে তেলের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। হরমুজ প্রণালির মতো গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহ পথ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কাও এ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ।
বাজারদরের হিসেবে, গত শুক্রবার পর্যন্ত সেপ্টেম্বরে মেয়াদ শেষ হতে যাওয়া ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম নির্ধারিত হয়েছে ব্যারেলপ্রতি ৬৮.৩০ ডলার, আর ডব্লিউটিআই (WTI) তেলের দাম নির্ধারিত হয়েছে ৬৬.৫০ ডলার।
বিশ্ববাজারে তেলের চাহিদা, সরবরাহ, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাজার স্থিতিশীলতার ওপর নির্ভর করে ওপেকের এই সিদ্ধান্ত আগামী মাসগুলোতে বিশ্ব অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে, তা পর্যবেক্ষণের বিষয় হয়ে উঠছে।