
বিশেষ প্রতিনিধি :
গণপূর্তের আলোচিত দুর্নীতিবাজ ও গণঅভুত্থানে দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়া আওয়ামীলীগের দোসর হিসেবে খ্যাত নির্বাহী প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান চুন্নু,এবার নতুন পরিচয় নিয়ে দৃশ্যপট হাজির হতে তৎপরতা শুরু করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। গণপূর্তের একাধিক সূত্র বলছে শেখ হাসিনা সরকারের সময় নিজেকে সব মন্ত্রীর কাছের ও আস্থাভাজন হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়া চুন্নু এবার নিজেকে সাচ্চা জামায়াত বিএনপির লোক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে তার কিছু আলামতও স্পষ্ঠ হতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছে গণপূতের একাধিক সূত্র।
জানা যায়, নিজেকে বিএনপি জামায়াতের ফ্রন্ট লিডার হিসেবে প্রমাণ করতে তিনি এখন স্ত্রীর পারিবারিক পরিচয় ও প্রভাব ব্যবহার করছেন। তার স্ত্রী ডা: সাইমুন নাহার পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের লেকচারার। এই ডা: সাইমুন নাহার এর চাচাত ভাই ছাত্রদল নেতা শামীম। এই শামীমই এখন চুন্নুকে বিএনপির লোক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করছেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া ছাত্র জীবনে চুন্নু আহসানুল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্বি বিদ্যালয়ে ছাত্র শিবিরের নেতা ছিলেন এমন প্রচার করছেন।
এ বিষয়ে কথা বললে,ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক একজন সভাপতি ও বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বশীল রোল পালনকারি নেতা গণমাধ্যমকে বলেন, ইসলামী ছাত্র শিবির একটা বিশাল সংগঠন। সারা দেশে এ সংগঠনের অনেক নেতাকর্মি সবাইকে সমান ভাবে মনে রাখা অসম্ভব। তবে একটা কথা বলতে পারবো ছাত্র শিবিরের কোন নেতা কর্মি সরকারের অর্থ চুরি করবে, দূর্নীতি করে নিজেকে দূর্নীতিবাজ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে তার পরও তাকে শিবির বা জামায়াত নিজেদের লোক হিসেবে ওন করবে এটা ভাবার কোন কারণ নেই।
আমরা এ জাতীয় কাজকে কখনো স্বীকৃতি দেয় না। বা এমন কাউকে আমাদের লোক হিসেবে কখনো প্রটেক্ট করার চেষ্টা কেউ করবে না। পটুয়াখালি যুবদলের সোহেল রানা নামক একজন যুবদল নেতার নামও এসেছে চুন্নুকে প্রটেক্ট করার তালিকায়।
গণপূর্তের একাধিক সূত্র বলছে, প্রকৌশলী চুন্নু আপদ মস্তক একজন দূর্নীতিবাজ মানুষ। টেন্ডর নিয়ন্ত্রণ, নিয়োগ বদলি, কমিশন বাণিজ্যসহ কাজ না করে সরকারি অর্থ তসরুপের বহু অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এ নিয়ে একাধিক তদন্ত কমিটি গঠন করেছে মন্ত্রণালয়। সে সব ফাইল আওয়ামীলীগের প্রভাব খাটিয়ে তিনি আটকে রেখেছেন। এখন দূর্নীতিতে জিরো টলারেন্স এর সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ায় বেশ খানিকটা ভীতির মধ্যে রয়েছে এই দূর্নীতিবাজ প্রকৌশলী। এ কারণে ছাত্র দল ও যুবদলকে ব্যবহার করে সরকারি দপ্তরে আটকে থাকা ফাইল গুলো যাতে নতুন করে গতি না পায় সে জন্য তৎপরতা শুরু করেছে চুন্নু।
সূত্র বলছে, সীমাহীন দুর্নীতির মাধ্যমে অল্প কিছুদিনের মধ্যে গড়ে তুলেছে শতশত কোটি টাকার সম্পদ ও নগদ অর্থ। বিদেশে অর্থ পাচারের পাশাপাশি বাড়িও কিনেছেন দেশের বাইরে। দেশের মাটিতেও গড়ে তুলেছেন দুর্নীতির সাম্রাজ্য। নিজ এলাকা পটুয়াখালিতে গড়ে তুলেছেন নাহিয়ান ব্রীকস ফিল্ড, পটুয়াখালি কলেজ রোডে দু’তলা বাড়ী, পটুয়াখালি সদর উপজেলার কমলাপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ ধারান্দি গ্রামে ৫ একর জমি, পটুয়াখালিতে নেক্সাস নামে একটি গামেন্টস এর শোরুম, সাভারে ১০ কাঠার একটি প্লট, ঢাকা ধানন্ডির সেন্ট্রাল রোডে একটি ফ্ল্যাট, বেইলী রোডে একটি ফ্ল্যাট, এছাড়াও রয়েছে নামে বেনামে অসংখ্য সম্পদ।
সূত্রমতে, গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলো তৈরির সরকারি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া যায়। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসান স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ তথ্য জানা যায়। চিঠির স্মারক নম্বর- ২৫.০০.০০০০.০৫৩.০০১.০০২.১৯.২৭১। অভিযোগটি গত ২৩ আগস্ট করা হয়। অভিযোগের বিষয়ে তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন প্রদানের জন্য গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব মুহাম্মদ সোহেল হাসানকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। সেই প্রেক্ষিতে মুহাম্মদ সোহেল হাসান গত ২১ আগস্ট গণপূর্ত অধিদপ্তরের মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে আইভি বাংলোতে পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শনকালে দেখা যায়, মিরপুর পাইকপাড়াস্থ পিডব্লিউডি ট্রেনিং সেন্টার (পুরাতন) এর ২য় তলার সিড়ির পূর্ব পাশের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত কক্ষ নম্বর ৭ ও ৮ দুটি কক্ষকে আইবি বাংলোতে রূপান্তরের লক্ষ্যে সংস্কার/মেরামত ও আধুনিকায়ন কাজের জণ্য ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরের বরাদ্ধকৃত অর্থ ইতোমধ্যে উত্তোলনপূর্বক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে প্রদান করা হয়েছে। কিন্তু ওই ৭ ও ৮ নম্বর কক্ষে কোনো সংস্কার/মেরামত বা আধুনিকায়নের কাজ করা হয়নি। তবে ৭ নম্বর কক্ষে দুই শ্রমিককে তড়িঘড়ি করে ডেকোরেশনের কাজ শুরু করতে দেখা গেছে। তখন তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত নতুন করে কোনো কাজ না করার জন্য নির্বাহী প্রকৌশলীসহ অন্যান্য প্রকৌশলীদের নির্দেশ দেয়া হয়।
পরবর্তীতে ওই দুটি কক্ষে যেনো কোনো সংস্কার/মেরামত কাজ না করতে পারে সেজন্য গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (সংস্থাপন) আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর ও নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম) পবিত্র কুমার দাশ এর সহযোগীতায় উক্ত কক্ষ দুটিতে সিলগালা করার নির্দেশ দেন। যা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের যুগ্মসচিব (উন্নয়ন অধিশাখা-০৯) মো. মাহমুদুর রহমান হাবিবকে অবহিত করা হয়।
একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে, মিরপুর ডিভিশনের পূর্ত সার্কেলে এই অর্থ আত্মসাৎই নয়, সাইফুজ্জামান চুন্নুর বিরুদ্ধে রয়েছে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ।
এবিষয়ে গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী (সংস্থাপন) আহমেদ আব্দুল্লাহ নূর এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাকে এবিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে ঠিকই। তবে এষিয়ে আমি কিছু জানি না।
নির্বাহী প্রকৌশলী (ই/এম) পবিত্র কুমার দাশ এর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমাকে এর সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছিল ঠিকই। তবে আমি ঢাকার বাইরে থাকায় আমার পরিবর্তে অন্য কাউকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এবিষয়ে আমি কিছু জানি না।
এ সব বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রকৌশলী সাইফুজ্জামান এর সাথে যোগযোগ করা হলে গণমাধ্যমে থাকা তার অনেক পরিচিতদের নাম শুনিয়ে বিশেষ একজনের সাথে কথা বলতে বলে ফোন কেটে দেন।