
নাইজেরিয়ার মধ্যাঞ্চলে ভয়াবহ বন্যায় অন্তত ১৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং -বাস্তুচ্যুত প্রায় ১০ লাখ মানুষ,জানিয়েছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নাইজার রাজ্যের গ্রামীণ শহর মকওয়াতে বুধবার রাত থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণের পর এই বন্যা দেখা দেয়, যা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত স্থায়ী হয়। শনিবার রাজ্যের জরুরি ব্যবস্থাপনা সংস্থার (NSEMA) মুখপাত্র ইব্রাহিম আওদু হুসেইনি জানান, মকওয়া শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে আরও কিছু মৃতদেহ উদ্ধার করার পর মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৫১-এ পৌঁছেছে।
অনেকেই নাইজার নদীতে ভেসে গেছেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ফলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বোলা টিনুবু এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন এবং জানিয়েছেন, উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম নিরাপত্তা বাহিনীর সহায়তায় অব্যাহত রয়েছে।
তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখেছেন, “ত্রাণ সামগ্রী এবং অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা তাৎক্ষণিকভাবে পাঠানো হচ্ছে।”
স্থানীয় বাসিন্দা মোহাম্মদ ট্যাঙ্কো আল জাজিরাকে জানান, “আমরা সবকিছু হারিয়েছি, পরিবার হারিয়েছি। আর কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এই বাড়ি থেকেই অন্তত ১৫ জনকে হারিয়েছি।”
অন্য এক জীবিত প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমি শুধু রাতের পোশাক পরেই পালাতে পেরেছি। এখন তো বুঝতেও পারছি না আমাদের বাড়ি কোথায় ছিল।”
আরও বৃষ্টিপাতের আশঙ্কা
আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, আগামী কয়েকদিনে আরও ভারী বর্ষণের আশঙ্কা রয়েছে, যার ফলে অঞ্চলে নতুন করে বন্যা দেখা দিতে পারে।
নাইজেরিয়ায় ছয় মাসব্যাপী বর্ষাকালে বন্যা একটি নিয়মিত হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরিকল্পিত নির্মাণ এবং দুর্বল ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে এসব দুর্যোগের মাত্রা ও ঘনত্ব দিন দিন বাড়ছে।
নাইজেরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বন্যা ঝুঁকি বিশ্লেষক উগোন্না নকুনোনও আল জাজিরাকে বলেন, “বন্যা এখন এপ্রিল থেকে অক্টোবরের মধ্যে বার্ষিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
তিনি সতর্ক করে বলেন, “যদিও বন্যার ঝুঁকি দীর্ঘদিন ধরেই জানা ছিল, কিন্তু কার্যকর রাজনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এই বন্যা জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল, যার কারণে বৃষ্টিপাতের সময়কাল কম হলেও তা অত্যন্ত প্রবল হচ্ছে। বছরে যতটা বৃষ্টির প্রত্যাশা থাকে, তা এক বা দুই মাসেই নেমে আসে—মানুষ এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত নয়।”
গত বছরও একই ধরনের বন্যায় নাইজেরিয়ায় ১,২০০ জনের বেশি মানুষ মারা যান এবং প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হন।
জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা (NEMA) এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই মর্মান্তিক ঘটনাটি জলাধারের পাশে ঘরবাড়ি নির্মাণের ঝুঁকি এবং ড্রেনেজ ও নদীপথ পরিষ্কার রাখার গুরুত্বের একটি সময়োপযোগী সতর্কবার্তা।”