
গাজায় চলমান ৬০০ দিনেরও বেশি সময়ের গণহত্যামূলক যুদ্ধ’-এর পটভূমিতে অবশেষে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থনে পরিবর্তন আনছে তার দীর্ঘদিনের পশ্চিমা মিত্ররা—যদিও তা এখনও বেশ দেরিতে এবং কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
বিশ্বজুড়ে পাল্টে যাওয়া জনমত, এবং ইসরায়েলের অভ্যন্তরেও নেতানিয়াহু সরকারের যুদ্ধনীতির বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান সমালোচনার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে পশ্চিমা মিডিয়ার কাভারেজে। তবে এখনো এসব ‘পরিবর্তন’ প্রাথমিকভাবে বিবৃতি এবং হুঁশিয়ারিতেই সীমাবদ্ধ, কার্যকর পদক্ষেপ খুবই কম।
কড়া কথা, কম পদক্ষেপ
গত দুই সপ্তাহে ব্রিটেন, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা ইসরায়েলকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে কঠোর সমালোচনা করেছেন। তাদের মতে, ইসরায়েল গাজার দুর্দশাগ্রস্ত মানুষের জন্য খাদ্য ও ওষুধ প্রবেশে বাধা দিচ্ছে—যা যুদ্ধাপরাধের শামিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় ব্রিটেন ইসরায়েলের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির আলোচনা স্থগিত করেছে এবং ইইউ ইসরায়েলের সঙ্গে তাদের বিদ্যমান অর্থনৈতিক চুক্তির পুনর্মূল্যায়নের ঘোষণা দিয়েছে।
এমনকি জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মার্টজ, যিনি একসময় ইসরায়েলের অন্যতম প্রবল সমর্থক ছিলেন, তিনিও বলেছেন, “গাজায় চলমান মানবিক বিপর্যয় আর হামাস বিরোধী যুদ্ধের নামে ন্যায়সঙ্গত বলে বিবেচিত হতে পারে না।”
ট্রাম্প-নেতানিয়াহু দ্বন্দ্ব
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নেতানিয়াহুর দূরত্বও দিনে দিনে বাড়ছে। ফেব্রুয়ারিতে ট্রাম্প গাজা খালি করে সেখানে ‘রিভিয়েরা-স্টাইল’ রিসোর্ট নির্মাণের পরিকল্পনার কথা বলেন। কিন্তু নেতানিয়াহু ‘অপারেশন গিডিয়নের রথ’ চালু করে দাবি করেন, তিনি সেই পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন করছেন।
জবাবে ট্রাম্প বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এখন চায় পুরো পরিস্থিতি যত দ্রুত সম্ভব থেমে যাক।”
বিশ্লেষকদের মত -[নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির মনিকা মার্কস বলেন] “গ্লোবাল সাউথ বহু আগেই ইসরায়েল নীতির নিন্দা করেছিল। পশ্চিমা বিশ্বের এখনকার অবস্থান পরিবর্তন অনেক দেরিতে এবং কম মাত্রায় হচ্ছে।” সিঙ্গাপুরের গবেষক ক্লেমেন্স চাই বলেন, “বিশ্বব্যাপী জনমতের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাচ্ছে, তবে কেবল বক্তব্য বদলেই যদি বাস্তব পরিবর্তন আশা করা হয়, তাহলে সেটি অতিরিক্ত আশাবাদী চিন্তা।” তারা উল্লেখ করেন, ইসরায়েলের বিরুদ্ধে কার্যকর নিষেধাজ্ঞা কিংবা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের গ্রেপ্তারি পরোয়ানার বিষয়ে পশ্চিমারা এখনো নীরব। GHO বিতর্ক ও মানবিক সহায়তার রাজনীতি
গাজায় এখন মার্কিন-সমর্থিত GHO নামের একটি বাহিনী ত্রাণ বিতরণ করছে। কিন্তু জাতিসংঘ ও এনজিওগুলোর মতে, এটি মানবিক সহায়তার ছদ্মাবরণে ইসরায়েলের রাজনৈতিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের হাতিয়ার।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বদল হবে না
চায় বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র চাপ না দিলে ইসরায়েল তার নীতি পরিবর্তন করবে না।” তিনি মনে করেন, ট্রাম্প এখন আরব মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন ও ইরানের সঙ্গে সম্ভাব্য চুক্তির দিকে মনোযোগী, যা ইসরায়েলি স্বার্থের বাইরে।
যুদ্ধ থামবে না, সহায়তা সামান্য বাড়লেও
গাই বার্টনের মতে, পশ্চিমা চাপের ফলে গাজায় কিছু ত্রাণ ঢুকতে পারে, কিন্তু যুদ্ধ বন্ধের কিংবা নেতানিয়াহুর অবস্থান বদলের সম্ভাবনা নেই। “যদি কিছু ট্রাক ঢোকে, পশ্চিমা নেতারা সেটিকেই যথেষ্ট উন্নয়ন বলে ধরে নেবেন,” তিনি বলেন।