
৪জনু থেকে শুরু হচ্ছে বিশ্ব’মুসলিম সম্প্রদায়ের সর্বোচ্চ ধর্মীয় প্রার্থনা পবিত্র হজ্জ্ব,এবছর হজ্জ পালন করবে বিশ্বের প্রায় ১০লাখ মুসলমান এই বছর ৪ জুন থেকে হজ্ব শুরু:
আরাফার দিন ৫ জুন, ঈদুল আজহা ৬ জুন
রিয়াদ, সৌদি আরব | [৩০ মে ২০২৫] — সৌদি আরব সরকার ঘোষণা করেছে, এ বছরের পবিত্র হজ্ব যাত্রা শুরু হবে আগামী ৪ জুন থেকে। চাঁদ দেখা যাওয়ার পর মঙ্গলবার সৌদি সুপ্রিম কোর্ট এই সিদ্ধান্ত জানায়, যা সরকারি বার্তা সংস্থা SPA দ্বারা প্রকাশিত হয়।
সৌদি হজ্ব ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী তৌফিক আল-রাবিয়াহ এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, ইতোমধ্যে বিশ্বজুড় থেকে প্রায় ১০ লাখের বেশি হজ্বযাত্রী সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। গত বছর এই সংখ্যা ছিল প্রায় ১৮ লাখ।
হজ্বের গুরুত্ব ও সময়সূচি
হজ্ব ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি, যা প্রত্যেক শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলমানের জন্য জীবনে একবার পালন করা ফরজ। এটি অনুষ্ঠিত হয় ইসলামি চান্দ্র মাস ধুল-হিজ্জাহর ৮ তারিখ থেকে শুরু করে ১২ বা ১৩ তারিখ পর্যন্ত।
এ বছর আরাফার দিন পড়েছে ৫ জুন এবং ঈদুল আজহা উদযাপিত হবে তার পরদিন, অর্থাৎ ৬ জুন। ২০২৫ সালের হজ্ব শেষবারের মতো গ্রীষ্মকালে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। আগামী ১৬ বছরে এটি আর গ্রীষ্মে পড়বে না।
তাপমাত্রা ও নিরাপত্তা প্রস্তুতি
২০২৪ সালে হজ্ব চলাকালীন তাপমাত্রা উঠেছিল রেকর্ড ৫১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যার ফলে তীব্র গরমে ১,৩০০ জনের বেশি হাজির মৃত্যু হয়েছিল। এবছরও সৌদি কর্তৃপক্ষ তাপদাহ থেকে রক্ষা পেতে বিশেষ প্রস্তুতি নিয়েছে।
হজ্বের ধাপসমূহ সংক্ষেপে
১. ইহরাম: হজ্বের শুরুতে আত্মশুদ্ধির প্রস্তুতি, বিশেষ পোশাক পরিধান ও আচরণ নিয়ম পালন।
২. আগমনের তাওয়াফ ও সাঈ: কাবা শরীফকে সাতবার প্রদক্ষিণ এবং সাফা-মারওয়া পাহাড়ের মাঝে হাঁটা।
৩. মিনা যাত্রা: ধুল-হিজ্জাহ ৮ তারিখ মিনায় রাতযাপন।
আরাফাতের দিন: ৯ তারিখ আরাফাত ময়দানে অবস্থান ও দোয়া; এটি হজ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন।
৫. মুযদালিফা: সূর্যাস্তের পরে এখানে রাতযাপন এবং কংকর সংগ্রহ।
৬. ১০ তারিখ – ঈদের দিন:
রমি আল-জামারাহ: শয়তান প্রতীকী স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ।
কুরবানী: ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মরণে পশু কোরবানি।
হালক/তাকসির: মাথা মুন্ডন বা চুল কর্তন।
তাওয়াফ আল-ইফাদাহ: পুনরায় কাবা শরীফ তাওয়াফ।
৭. ১১-১২ ধুল-হিজ্জাহ: প্রতিদিন তিনটি স্তম্ভে পাথর নিক্ষেপ।
৮. ১৩ ধুল-হিজ্জাহ (ঐচ্ছিক): যারা আরও একদিন থাকেন, তাঁরা আবার পাথর নিক্ষেপ করেন।
৯. বিদায়ী তাওয়াফ: হজ্ব শেষে মক্কা ত্যাগের পূর্বে কাবা ঘিরে একটি শেষ তাওয়াফ।
ইসলামী গুরুত্ব ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট
হজ্ব শব্দটি এসেছে আরবি “হ-জ-জ” ধাতু থেকে, যার অর্থ “একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে যাত্রা”। এটি কেবল শারীরিক অনুশীলন নয়, বরং আত্মশুদ্ধি, কিয়ামতের দিনের স্মরণ এবং নবী ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পরিবারের আত্মত্যাগের প্রতীক।
বিশ্বাস করা হয় যে, কাবা শরীফ নবী ইব্রাহিম (আ.) ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আ.) আল্লাহর নির্দেশে নির্মাণ করেছিলেন। পবিত্র কোরআনে হজ্ব ১২ বার উল্লেখিত হয়েছে এবং একটি সুরার নাম রাখা হয়েছে “সূরা হজ্ব”।