
সূরা ফাতেহার তাফসিরে খাজা মঈনুউদ্দীন চিশতী রহঃ।
ধর্ম ডেস্ক :
আউলিয়া কুলে’র শিরোমণি হযরত খাজা মঈনুউদ্দীন চিশতী রহঃ বলেন,যে কোনো নেক উদ্দেশ্য পূরর্ণ কল্পে ফাতেহা অধিক মাত্রায় পাঠ করা উচিত তিনি বলেন দিকে তিনবার আমীন বলিবে তিনি আরও বলেন, সূরা ফাতেহা দুঃখ কষ্টের অবসান ঘটনা। যে রোগীর বেলায় চিকিৎসা নিষ্কল প্রমাণিত হইয়াছে ফজরের নামাজের সুন্নাত ওফরযের মধ্যবতী সময় এক চল্লিশবার বিসমিল্লাহ সহ সূরা ফাতেহা পাঠ করিয়া তাহার শরীর ফুঁক দিবে, ইনশাআল্লাহ রোগ দূর হইবে।
হাদীস শরীফে আছে, আল ফাতিহাতু শেফাউম মিন কুল্লু দায়ি,,। অর্থাৎ সূরা ফাতেহা সকল প্রকার রোগের ঔষধ,
খাজা সাহেব বলেন একবার খলিফা হারুণুর রশিদ কঠিন রোগাক্রান্ত হইয়া পড়েন ন্যূানাধিক দুই বছর কাল তিনি উহাতে ভুগিয়াছিলেন বহুবার চিকিৎসা করানো হইয়াছে। বহু হেমিক বিদায় হইয়াছে। কিন্তু রোগমুক্তির কোন লক্ষন দেখিতে পাওয়া যায় নাই। অবশেষে খলিফা তার উযীরকে তাপসী কুল শিরোমণি হযরত খাজা ফযীন আয়াযের নিকট পাঠাইলেন। খাজা ফযীল আয়ায খুব উঁচুদরের ওলি ছিলেন। খলিফার অসুখের কথা শুনিয়া তিনি তাঁর দরবারে হাজির হইলেন। দেখিলাম ক্ষীণকায় খলিফা রোগ যন্ত্রণায় ছটফট করিতেছেন। তিনি খালিফার পাশ্বে উপবেশন করিলেন ও একচল্লিশবার সূরা ফাতেহা পাঠ করিয়া তাহার ফুঁক দিলেন। আল্লাহর কি মহিমা, সূরা পাঠ শেষ হইতে না হইতে খলিফা উঠিয়া বসিলেন। তিনি তখণ সম্পূর্ণ সুস্থ।
(সুবহানাআল্লাহ)
হযরত আলী আঃ সূরা ফাতেহা পাঠ করিয়া এক রোগীর দেহে ফুঁক দিলেন। রোগীব্যক্তি সেই সময়ই আরোগ্য লাভ করেন। অতঃপর তাহার কোন আত্মীয় আসিয়া তাহাকে জিজ্ঞেসা করে তুমি এই রোগমুক্ত হইলে কিরুপে সে
উত্তর দিল, হযরত আলী আঃ তাশরীফ আনিয়াছিলেন, তিনি সূরা ফাতেহা পাঠ করিয়া আমাকে ফুঁক দিয়াছেন তাঁহাতেই আমি সারিয়া উঠিয়াছি। ভাগ্যের কি পরিহাস বেচারার কথা শেষ না হইতেই সে আবার রোগাক্রান্ত হইয়া পড়িল এবং রোগের তাহার জীবনবসান ঘটিল।
খাজা সাহেব বলেন, বদ এতেকাদই ঐ ব্যক্তি মৃত্যুর কারন। সে মনে করিয়াছিল, হযরত আলী আঃ বদৌলতেই সে মুক্তি লাভ করিয়াছিল। সকল শক্তির আধার যে একমাত্র আল্লাহ তাআলা একথা তাহার মনে স্হান পান নাই। যে জন্য তাকে চরম দন্ড ভোগ করিতে হইল।
খাজা সাহেব বলেন আকীদা সব সময় ঠিক রাখা উচিত। নিয়ত ভালো থাকিলে সূরা ফাতেহা পড়িয়াও শুধুমাত্র গায়ে হাত বুলাইলে রোগ সারিয়া যাইতে পারে।
তাফসিরে আছে আল্লাহ তাআলা প্রতিটি সূরার এক একটি নাম রাখিয়াছেন কিন্তু সূরা ফাতেহার নাম রাখিয়াছেন সাতটি।
যথারীতি।
(১) ফাতেহাতুল কিতাব
(২) সাবউল মাছানী
(৩) উম্মুল কিতাব
(৪) উম্মুল কুরাআন
(৫) সূরাতুল মাগফিরাত
(৬) সূরাতুর রহমান
(৭) সূরাতুল কনয
হযরত খাজা মঈনউদ্দীন চিশতী রহঃ বলেন একবার রাসূল সল্লাল্লাহু সাহারায়ে কেরাম রাঃ সমভিব্যাহারে
বসিয়া নসিহত করিতেছেন যা আমার আগে আর কোন পয়গম্বরে দেওয়া হয় না-ই।
অতঃপর বলিলেন, একবার হযরত জিব্রাইল আঃ আমাকে আল্লাহর বাণী শুনাইয়া গেলেন এবং বলিলেন, আপনার প্রতি যে কিতাব আমি নাযিল করিয়াছি উহাতে এমন একটি সূরা রহিয়াছে যাহা তাওরাতে থাকিলে হযরত মূসা আঃ এর উম্মতগণ পথভ্রষ্ট হইত না।
ইনজিলে থাকিলে হযরত ঈসা আঃ উম্মতগণ মূর্তি পূজা করিত না। যবুর কিতাবে থাকিলেও হযরত দাউদ আঃ এর উম্মতগন বেপরোয়া হইত না। তোমার প্রতি উহা নাযিল করার কারন যে তোমার উম্মতের উহাদ্বারা আমার সাহায্য লাভ করিতেনপারে ও কেয়ামতের দিন জাহানামের শাস্তি হইতে রক্ষা পায়। হযরত জিব্রাইল (আঃ) বলিলেন উহা সূরা ফাতেহা। তিনি আরও বলিলেন, খোদার কসম, যিনি আপনাকে সত্য নবীরুপে প্রেরন করিয়াছেন,
যদি পৃথিবীর সকল সমুদ্রের পানি কালি হইয়া যায় এবং বৃক্ষরাজি কলমে পরিণত হয় আর উহাদ্বারা তামাম ফেরেশতা ও মানুষ একত্রে এই সূরা ফজীলত লিখতে চেষ্টা করে তবুও উহার একটি ফযীলতও তাহারা লিখিয়া শেষ করিতে পারিবে না,
আল্লাহ আঁকবার।
খাজা সাহেব বলেন একবার আমি ও আমার পীর হযরত শায়েখ খাজা ওসমান হারুণী রহাঃ সফর করিতে ইরাকের দজলা নদীর তীরে কিনারায় আসিয়া উপস্থিত হইলাম, পারাপারের জন্য কোন নৌকা ছিলোনা।
অথচ আমাদিগকে তাড়াতাড়ি ওপারে পৌঁছাতে হইবে। কি করিব ভাবিয়া পাইতেছিলাম না। এমন সময় শায়েখ সাহেব আমাকে বলিলেন, চক্ষু বন্ধ কর। আমি চক্ষু বন্ধ করিলাম, চক্ষু খুলিয়া দেখিলাম আমরা উভয়েই নদীর অপার তীরে পৌঁছিয়া গিয়াছি। আমার বড় তাজ্জব বোধ হইল শায়েখ সাহেবকে জিজ্ঞেসা করিলাম, কিরূপে আমরা নদী পার হইলাম, তিনি বলিলেন আমি পাঁচবার সূরা ফাতেহা পাঠ করিয়া তোমাকেও সাথে নিয়া আসিয়াছি।
হুজুর খাজা গরীব নেওয়াজ মঈনুউদ্দিন চিশতী আজমিরি রহঃ বলেন।