
বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক রেজিস্ট্রেশন পুনর্বহাল করে দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের বৈধতা দিয়েছে।
রোববার দেওয়া রায়ে আদালত নির্বাচন কমিশনকে দলটির রেজিস্ট্রেশন ফিরিয়ে দিতে বলেছে, এবং সেটি যেন দ্রুত সময়ে কার্যকর করা হয় — এমন নির্দেশও দিয়েছে। চার সদস্যের আপিল বেঞ্চের এই রায় প্রদান করেন প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত বেঞ্চ। আদালতের এই রায় ২০১৩ সালে হাইকোর্টের দেওয়া জামায়াতে ইসলামীর রেজিস্ট্রেশন অবৈধ ঘোষণার আদেশটি বাতিল করেছে। ২০১৩ সালের ১ আগস্ট বাংলাদেশ হাইকোর্ট জামায়াতের রেজিস্ট্রেশন অবৈধ ঘোষণা করে, একটি রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে। পরে, ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশন এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক রেজিস্ট্রেশন আনুষ্ঠানিকভাবে বাতিল করে। এরপর দলটি হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করেছিল।
তবে, ২০২৩ সালের নভেম্বরে জামায়াতের প্রধান আইনজীবী শুনানিতে অনুপস্থিত থাকায় প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে গঠিত ছয় সদস্যের আপিল বিভাগ জামায়াতের আপিলটি “ডিফল্টের কারণে খারিজ” করে দেয়। ফলে দলটির রেজিস্ট্রেশন তখনও অবৈধই থেকে যায়।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পাল্টে যায়, এবং জামায়াতে ইসলামীর পক্ষে আবারও আপিল পুনরুজ্জীবনের আবেদন করা হয়। আদালত সেই আবেদন গ্রহণ করে এবং শুনানিতে জামায়াতের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির।
এই রায়ের ফলে জামায়াতে ইসলামীর আইনগত অবস্থান পুনরুদ্ধার হলো, এবং আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলটি বিএনপির পাশাপাশি আরেকটি পুরনো রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে অংশ নিতে পারবে। উল্লেখ্য- জামায়াতে ইসলামী দল হিসেবে এবং এর নেতারাও সক্রিয়ভাবে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করে অখণ্ড পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নেন। তখন পাকিস্তানি শাসকদের সহযোগিতায় শান্তি কমিটি গঠন করা হয়।
এই দলটির নেতৃত্বেই রাজাকার, আলবদর ও আল শামস বাহিনী হয়েছিলো যারা ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডসহ যুদ্ধকালীন গণহত্যায় সহযোগিতার জন্য তীব্রভাবে সমালোচিত। ১৯৭২ সালে লন্ডনে গিয়ে পূর্ব পাকিস্তান উদ্ধার কমিটি গঠন করেছিলেন গোলাম আজম।
বাংলাদেশের বিরোধিতা ও গণহত্যায় সহায়তার জন্য ১৯৭৩ সালে যে ৩৮ জনের নাগরিকত্ব সরকার বাতিল করেছিলো গোলাম আজমও ছিলেন তার একজন। কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর দেশের বাইরে থাকা জামায়াত নেতারা আবার দেশে ফিরতে শুরু করেন।