ঢাকারবিবার , ২০ অক্টোবর ২০২৪
  1. Global News
  2. অপরাধ
  3. অভিযোগ
  4. অর্থনীতি
  5. আইন-বিচার
  6. আটক
  7. আন্তর্জাতিক
  8. আবহাওয়া
  9. কৃষি-সংবাদ
  10. খেলা-ধুলা
  11. জাতীয়
  12. জীবনযাত্রা
  13. ধর্ম
  14. প্রবাস প্রযুক্তি
  15. ফিচার
আজকের সর্বশেষ সবখবর

হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) পাক সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের কিছু অম্লান বানী।।

GlobalNation
অক্টোবর ২০, ২০২৪ ৪:১৫ অপরাহ্ণ
Link Copied!

হযরত ইমাম হুসাইন (আঃ) পাক সম্পর্কে অমুসলিম মনীষীদের কিছু অম্লান বানী।।

ধর্ম ডেস্ক :

ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীঃ আমি মনে করি ইসলাম তরবারির জোরে নয়, বরং ইমাম হুসাইন (আ.)’র চরম বা সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের ফলেই বিকশিত হয়েছে।

নিপীড়িত (মজলুম) হওয়া অবস্থায় কিভাবে বিজয় অর্জন করতে হয় আমি তার শিক্ষা পেয়েছি ইমাম হুসাইনের কাছে।
ভারত যদি একটি বিজয়ী রাষ্ট্র হতে চায় তাহলে তাকে ইমাম হুসাইনের আদর্শ অনুসরণ করতে হবে।
ইমাম হুসাইনের ৭২ জন সেনার মধ্যে একজন সেনা যদি আমার থাকতো তাহলে আমি ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই অখণ্ড ভারতের স্বাধীনতা এনে দিতাম। ভারত যদি একটা সফল দেশ হতে চাই তাহলে অবশ্যই ইমাম হুসাইনের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে।।

ভারতের নোবেলজয়ী কবি ও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরঃ*
‌ন্যায়বিচার ও সত্যকে বাঁচিয়ে রাখতে অস্ত্র ছাড়াই বিজয় আসতে পারে জীবন উতসর্গ করার মাধ্যমে ঠিক যেভাবে বিজয়ী হয়েছেন ইমাম হুসাইন। ইমাম হুসাইন মানবতার নেতা ইমাম হুসাইন শীতলতম হৃদয়কেও উষ্ণ করেন। হুসাইনের আত্মত্যাগ আধ্যাত্মিক স্বাধীনতাকে তুলে ধরে।

স্বাধীন ভারতের প্রথম রাষ্ট্রপতি ডঃ রাজেন্দ্র প্রসাদঃ*
ইমাম হুসাইনের আত্মত্যাগ কোন একটি বিশেষ জাতি বা দেশের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং এই আত্মত্যাগ সমস্ত জাতির জন্য ভ্রাতৃত্ব বোধের বন্ধন।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেতা ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরুঃ ইমাম হুসাইনের আত্মত্যাগ সকল জাতি ও ধর্মের জন্য ন্যায়পরায়ণতার অনন্য উদাহরণ।

ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামী নেত্রী, কবি, সরোজিনী নাইডুঃ*
আমি সকল মুসলিমকে অভিনন্দন জানাই যে তাদের মধ্যে ইমাম হুসেইনের মত একজন মহান ব্যক্তি জন্মগ্রহণ করেছেন যিনি সকল জাতি এবং ধর্মেই একজন মহান ও সম্মানিত ব্যক্তিত্ব।

ধর্মীয় নেতা ও হিন্দুধর্মে একজন বিশিষ্ট ব্যক্তি স্বামী শংকরাচার্যঃ ইমাম হুসাইনের আত্মত্যাগই ইসলাম ধর্মকে বাঁচিয়ে রেখেছে, নাহলে এই পৃথিবীতে ইসলাম ধর্মের নাম নেওয়ার কেউই থাকতো না।

বিখ্যাত ইংরেজ সাহিত্যিক চার্লস ডিকেন্সঃ যদি ইমাম হুসাইন পার্থিব কামনা বাসনার জন্য যুদ্ধ করতেন তাহলে তিনি তাঁর বোন, স্ত্রী ও শিশুদের সঙ্গে আনতেন না। তিনি শুধু ইসলামের জন্যই ত্যাগ স্বীকার করেছেন।

ইংরেজ দার্শনিক ও ঐতিহাসিক টমাস কার্লাইলঃ আল্লাহর প্রতি ইমাম হুসাইন ও তাঁর সঙ্গীদের ঈমান ছিল মজবুত। তারা দেখিয়ে গেছেন যে, যেখানে সত্য ও মিথ্যা মুখোমুখি সেখানে সংখ্যার আধিক্য কোনো বিচার্য বিষয় নয়। ইমাম হুসাইন (আ.) মুষ্টিমেয় কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে যে বিজয় অর্জন করেছেন তা আমাকে বিস্মিত করেছে।

বিখ্যাত ইংরেজ প্রাচ্যবিদ অ্যাডওয়ার্ড ব্রাউনঃ এমন কোনো অন্তর পাওয়া যাবে কি যে, যখন কারবালার ঘটনা সম্পর্কে শুনবে অথচ দুঃখিত ও বেদনাহত হবে না? এমনকি কোনো অমুসলিমও এই ইসলামী যুদ্ধকে ও তাঁর পতাকাতলে যে আত্মিক পবিত্রতা সাধিত হয়েছে তা অস্বীকার করতে পারে না।

ইংরেজ ঐতিহাসিক ও পার্লামেন্ট সদস্য (MP) এডওয়ার্ড গিবনঃ সেই সুদূর অতীতের সেই পরিবেশে ইমাম হুসাইনের মৃত্যুর করুণ দৃশ্য পাষাণতম পাঠকের হৃদয়েও জাগিয়ে তোলে সহানুভূতি।

মার্কিন ঐতিহাসিক ওয়াশিংটন আরভিংঃ ইমাম হুসাইন ইয়াজিদের ইচ্ছার কাছে নতি স্বীকার করে জীবন রক্ষা করতে পারতেন। কিন্তু ইসলামের নেতৃত্ব ও আন্দোলনমুখি দায়িত্বভারের কারণেই ইয়াজিদকে স্বীকৃতি দেয়া থেকে বিরত থেকেছেন তিনি। ইমাম বনি উমাইয়ার কবল থেকে ইসলামকে মুক্ত করার জন্য। অচিরেই যে কোনো কষ্ট ও নিপীড়নকে বরণ করে নেয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেন। শুষ্ক মরু প্রান্তরের প্রখর সূর্য তাপের নীচে এবং আরবের উত্তপ্ত বালুরাশির মাঝে হুসাইনের আত্মা অবিনশ্বর হয়ে আছে।

ইংরেজ ঐতিহাসিক ফ্রেডরিক জেমসঃ ইমাম হুসাইন ও অন্যান্য বীর শহীদদের শিক্ষা হল, দুনিয়ায় চিরন্তন করুণা ও মমতার মূল নীতি বিদ্যমান যা অপরিবর্তনীয়। অনুরূপভাবে এটা প্রমাণিত হয় যে, যখন কেউ এই গুণগুলোর জন্য প্রতিরোধ গড়ে তুলবে এবং এ পথে অবিচলতা দেখাতে সক্ষম হবে তখন এইসব মূলনীতি দুনিয়ায় চিরন্তন ও চিরস্থায়ী হয়ে থাকবে।

বিখ্যাত ব্রিটিশ লেখক টমাস মাসারিকঃ আমাদের পাদ্রিরাও হযরত ঈসা- (আ.) এর শোক-গাঁথা বর্ণনার মাধ্যমে লোকদের প্রভাবিত করেন। কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.)’র অনুসারীদের মধ্যে যে আবেগ ও উচ্ছ্বাস দেখা যায় তা হযরত ঈসা (আঃ) এ’র অনুসারীদের মাঝে পাওয়া যাবে না। আর এর কারণ মনে হয় এটাই যে, ইমাম হুসাইন (আ.)’র শোকের বিপরীতে ঈসা (আ.)’র শোক যেন বিশালদেহী এক পর্বতের সামনে ক্ষুদ্র এক খড়কুটোর সমান।

বিখ্যাত ইংরেজ লেখক ও পর্যটক মরিস ডু কিবরিঃ ইমাম হুসাইন (আ.)’র শোক মজলিসে বলা হয় যে, তিনি মানুষের মর্যাদাকে অক্ষুণ্ণ রাখা এবং ইসলামের উচ্চ মহিমাকে অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য জান, মাল ও সন্তানদেরকে উতসর্গ করেছেন। তিনি ইয়াজিদের সাম্রাজ্যবাদ ও ছল-চাতুরীকে মেনে নেননি। তাই আসুন, আমরাও তাঁর এ পন্থাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করি এবং সাম্রাজ্যবাদীদের নাগপাশ থেকে মুক্ত হই। আর সম্মানের মৃত্যুকে অবমাননার জীবনের ওপর প্রাধান্য দেই।

জার্মান প্রাচ্যবিদ মরবিনঃ ইমাম হুসাইন (আ.) প্রিয়তম স্বজনদেরকে উতসর্গ করা এবং নিজ অসহায়ত্ব ও সত্য পন্থাকে প্রমাণিত করার মাধ্যমে দুনিয়াকে ত্যাগ ও আত্মোতসর্গের শিক্ষা দিয়েছেন এবং ইসলাম ও ইসলামপন্থীদের নামকে ইতিহাসে লিপিবদ্ধ করেছেন। আর বিশ্বে একে উচ্চকণ্ঠী করেছেন। ইসলামী জগতের এই সাহসী সেনা দুনিয়ার মানুষকে দেখিয়ে দিয়েছেন যে, অত্যাচার, অবিচার ও নিপীড়ন স্থায়ী নয়। আর অত্যাচারের ভিত বাহ্যিক দিক থেকে যত মজবুতই হোক না কেন, সত্যের বিপরীতে তা বাতাসে উড়ন্ত খড়কুটোর মত।

প্রখ্যাত প্রাচ্যবিদ নিকলসনঃ বনি উমাইয়া ছিল অবাধ্য ও স্বৈরাচারী। তারা ইসলামের বিধিবিধানকে উপেক্ষা করেছে এবং মুসলমানদের লাঞ্ছিত করেছে। আমরা যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করি তাহলে দেখব, ইসলাম আনুষ্ঠানিকতাসর্বস্ব শাহানশাহীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছে এবং ধর্মীয় শাসন শাহী শাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। এ কারণে ইতিহাস ন্যায্যত নির্দেশ করে যে, হুসাইন (আ.)’র রক্তের দায় বনি উমাইয়ার উপরে।

ইংরেজ প্রাচ্যবিদ স্যার পার্সি সয়েক্সঃ সত্যিকার অর্থে এ মুষ্টিমেয় কয়েকজন যে সাহস ও বীরত্বের প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা এমন উন্নতমানের ছিল যে, এ দীর্ঘ শতাব্দীকাল ধরে যারাই এ ব্যাপারে শুনেছে মনের অজান্তেই প্রশংসায় মুখ খুলেছে। হাতে গোনা এ কয়েকজন সাহসী পুরুষ কারবালার প্রতিরক্ষাকারীদের মত নিজেদের সমুন্নত নামকে চিরকালের জন্য অক্ষয় করে রেখেছেন।

খ্রিস্টান গবেষক অ্যান্টন বারাঃ যদি হুসাইন (আ.) আমাদের খ্রিস্টানদের মধ্য থেকে হতেন তাহলে প্রত্যেক দেশেই তাঁর জন্য পতাকা উড়াতাম এবং প্রত্যেক গ্রামেই তাঁর জন্য মিম্বার স্থাপন করতাম। আর মানুষকে হুসাইন (আ.)’র নামে খ্রিস্ট ধর্মের প্রতি আহ্বান জানাতাম।

মিশরের প্রখ্যাত রাজনৈতিক নেতা মরহুম মুহাম্মাদ জগলুল পাশাঃ ইমাম হুসাইন (আ.) এ কাজের মাধ্যমে নিজের ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ফরজ পালন করেছেন। এ ধরনের শোক মজলিসগুলো মানুষের মধ্যে শাহাদতের মন মানসিকতা গড়ে তোলে এবং সত্য ও ন্যায়ের পথে তাদের অভিপ্রায়কে বলীয়ান করে।

খ্রিস্টান পণ্ডিত ও সাহিত্যিক জর্জ জুরদাকঃ ইয়াজিদ যখন ইমাম হুসাইন (আ.)-কে হত্যার জন্য জনগণকে উতসাহিত করত এবং রক্তপাত ঘটানোর নির্দেশ দিত তখন তারা বলত, কতো টাকা দেবেন? কিন্তু ইমাম হুসাইন (আ.)-এর সঙ্গীরা তাঁকে বলতেন, আমরা আপনার সঙ্গে রয়েছি। আমাদেরকে যদি সত্তর (৭০) বারও হত্যা করা হয় তবুও পুনরায় আপনার পক্ষে যুদ্ধ করতে ও নিহত হতে চাইব।

ইমাম হোসাইন (আ.)’র কয়েকটি অমর বাণী

হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) ছিলেন সম্মান, দয়া, বীরত্ব, শাহাদত, মুক্তি ও মহানুভবতার আদর্শ। তাঁর আদর্শ মানবজাতির জন্য এমন এক ঝর্ণাধারা বা বৃষ্টির মত যা তাদের দেয় মহত্ত্বম জীবন, গতি ও আনন্দ। মানুষের জীবনের প্রকৃত মর্যাদা ও প্রকৃত মৃত্যুর সংজ্ঞাকে কেবল কথা নয় বাস্তবতার মাধ্যমে দেখিয়ে দিয়ে অমরত্ব দান করে গেছেন এই মহাপুরুষ। বিশেষ করে আল্লাহর পথে সর্বোচ্চ ত্যাগ ও শাহাদাতকে তিনি দিয়ে গেছেন অসীম সৌন্দর্য।

কারবালার মহাবিপ্লবের রূপকার ইমাম হোসাইন (আ.) মানবজাতির ওপর ও বিশেষ করে প্রকৃত মুমিন মুসলমানদের ওপর যে গভীর প্রভাব রাখবেন সে সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বাণী করে গেছেন স্বয়ং মাওলা মুহাম্মাদ (সা.)। তিনি বলেছেন, ” নিশ্চয়ই প্রত্যেক মু’মিনের হৃদয়ে হোসাইনের শাহাদতের ব্যাপারে এমন ভালবাসা আছে যে, তার উত্তাপ কখনো প্রশমিত হয় না। ” (মুস্তাদরাক আল-ওয়াসাইল, খণ্ড-১০, পৃষ্ঠা-৩১৮)

ইমাম জাফর আসসাদিক্ব (আ.) বলেছেন, “আমাদের তথা রাসূল (সা.)’র আহলে বাইতের ওপর যে জুলুম করা হয়েছে তার কারণে যে শোকার্ত, তার দীর্ঘশ্বাস হল তাসবীহ এবং আমাদের বিষয়ে তার দুশ্চিন্তা হল ইবাদত এবং আমাদের রহস্যগুলো গোপন রাখা আল্লাহর পথে জিহাদের পুরস্কার বহন করে।” এরপর তিনি বললেন, ‘নিশ্চয়ই এ হাদীসটি স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা উচিত।’

হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) কেবল জুলুমের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও মুক্তিকামী মানুষেরই আদর্শ ছিলেন না, সর্বোত্তম জিহাদ তথা আত্ম-সংশোধন ও পরিশুদ্ধিরও মূর্ত প্রতীক। অন্যদেরকে সৎকাজের দিকে ডাকার ও অসৎ কাজে নিষেধ বা প্রতিরোধের শর্ত হল, সবার আগে নিজেকেই পরিশুদ্ধ করা।

হযরত ইমাম হোসাইন (আ.)’র ছাপ্পান্ন বছরের জীবনের প্রতি সংক্ষিপ্ত দৃষ্টি দিলে দেখা যায়, ইমাম ছিলেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিনম্রতা, দয়া, ক্ষমাশীলতা, পরোপকার এবং খোদাভীরুতা ও খোদাপ্রেমের ক্ষেত্রেও মানবজাতির জন্য শীর্ষস্থানীয় আদর্শ। নামাজ আদায়, কুরআন তিলাওয়াত এবং দোয়া ও ইস্তিগফারের ক্ষেত্রেও তিনি ছিলেন পিতা ও মাওলা মুহাম্মাদ (সা.)’র ধারার স্বচ্ছ প্রতিচ্ছবি। হযরত ইমাম হোসাইন (আ.) দিন ও রাতে কয়েক শত রাকাত নামাজ আদায় করতেন। এমনকি জীবনের শেষ রাতেও তিনি দোয়া ও প্রার্থনা থেকে হাত গুটিয়ে নেননি। কারবালায় শত্রুদের কাছ থেকে সময় চেয়েছিলেন যাতে মহান প্রভুর সান্নিধ্যে একাকী প্রার্থনায় বসতে পারেন। তিনি বলেছিলেন, আল্লাহই ভাল জানেন যে, আমি নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, অত্যধিক দোয়া-মুনাজাত ও ইস্তিগফারকে কত ভালবাসি।

তাঁর জীবন এবং মৃত্যু (শাহাদাত) সব কিছুই মানব জাতির মর্যাদা ও আধ্যাত্মিকতাকে সমুন্নত করেছে। তাঁর পবিত্র মুখ থেকে নিঃসৃত জীবন গড়ার হৃদয়গ্রাহী কিছু বাণী আপনাদের সামনে উপস্থাপন করছি।

এক : তিনি বলেন :

أَلْنَّاسُ عَبِيْدُ اْلْدُّنْيَا وَاْلْدِيْنُ لَعِقٌ عَلَى أَلْسِنَتِهِمْ يَحُوْطُوْنَهُ مَا دَرَّتْ مَعَايِشُهُمْ فَإِذَا مُحِّصُوْا بِالْبَلاَءِ قَلَّ اْلْدَّيَّانُوْنَ

অর্থাৎ “জনসাধারণ দুনিয়ার গোলাম। ধর্ম তাদের জিহ্বার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে। যতক্ষণ পর্যন্ত তারা অনুভব করবে যে দীনচর্চা তাদের জীবনে কোন ক্ষতি বয়ে আনবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তারা দীনের চারপাশে ঘুরাফেরা করবে। কিন্তু যখন তারা কোন পরীক্ষার সম্মুখীন হয় তখন খুব কম সংখ্যকই দীনের পথে অবিচল থাকে।”১

দুই : ইমাম হোসাইন (আ.) তাঁর প্রিয় পুত্র ইমাম যয়নুল আবেদীনকে বলেন :

يَا بُنَىَّ إِيَّاكَ وَ ظُلْمَ مَنْ لاَ يَجِدُ عَلَيْكَ نَاصِرًا إِلاَّ اللهَ جَلَّ وَ عَزَّ

“হে বৎস! যে ব্যক্তির আল্লাহ্ ব্যতীত অন্য কোন সাহায্যকারী নেই তার উপর জুলুম করা থেকে বিরত থাকো। আল্লাহ্ এ ধরনের মজলুমের ফরিয়াদ অতি শীঘ্রই গ্রহণ করে থাকেন।”২

তিন : একদা জনৈক ব্যক্তি ইমামের কাছে দুনিয়া ও আখেরাতের মঙ্গল ও কল্যাণ রয়েছে এমন কাজ সম্পর্কে লিখার জন্যে আর্জি পেশ করলে তিনি উত্তরে লিখেন :

بِسْمِ اللهِ اْلْرَّحْمَانِ اْلْرَّحِيْمِ . أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ مَنْ طَلَبَ رَضِىَ اللهِ بِسَخَطِ اْلْنَّاسِ كَفَاهُ اللهُ أُمُوْرَ اْلْنَّاسِ وَ مَنْ طَلَبَ رَضِىَ اْلْنَّاسِ بِسَخَطِ اللهِ وَكَلَهُ اللهُ إِلَى اْلْنَّاسِ وَاْلْسَّلاَمُ

অর্থাৎ “আল্লাহর নামে, যিনি অতিশয় দয়ালু ও মেহেরবান। তারপর এই যে, যে ব্যক্তি মানুষের ক্রোধের প্রতি ভ্রক্ষেপ না করে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনায় কাজ করে যায় আল্লাহ মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট কার্যাবলীর ব্যাপারে তার সকল সমস্যার সমাধান করে দেবেন। আর যে ব্যক্তি মানুষকে সন্তুষ্ট করতে গিয়ে আল্লাহকে রাগাম্বিত করে তোলে আল্লাহ্ তাকে মানুষের প্রতিই ছেড়ে দেন, ওয়াসসালাম।”৩

চার : জনৈক ব্যক্তি ইমাম হোসাইনের কাছে বলল, ‘হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান! আমি গুনাহর মধ্যে নিমজ্জিত। আমার এ অবাধ্যতা থেকে পালানোর কোন পথ নেই। আমাকে আপনি উপদেশ দিন। তখন ইমাম বলেন :

إِفْعَلْ خَمْسَةَ أَشْيآءَ وَ أَذْنِبْ مَا شِئْتَ :

فَأَوَّلُ ذَلِكَ : لاَ تَأْكُلْ رِزْقَ اللهِ وَاْذْنِبْ مَا شِئْتَ

وَاْلْثَّانِى : أُخْرُجْ مِنْ وِلاَيَةِ اللهِ وَاْذْنِبْ مَا شِئْتَ

وَاْلْثَّالِثُ : اُطْلُبْ مَوْضِعًا لاَ يَرَاكَ اللهُ وَاْذْنِبْ مَا شِئْتَ

وَاْلْرَّابِعُ : إِذَا جَآءَ مَلَكُ اْلْمَوْتِ لِيَقْبِضَ رَوْحَكَ فَادْفَعْهُ عَنْ نَفْسِكَ وَاْذْنِتْ مَا شِئْتَ

وَاْلْخَامِسُ : إِذَا أَدْخَلَكَ مَالِكٌ فِىْ اْلْنَّارِ فَلآ تَدْخُلْ فِىْاْلْنَّارِ وَاْذْنِبْ مَا شِئْتَ

অর্থাৎ “পাঁচটি কাজ যদি করতে পার তবে তুমি যত ইচ্ছা পাপ করতে পার।

প্রথমটি হচ্ছে : আল্লাহর রিযিক ভক্ষণ করো না অতঃপর যত খুশী গোনাহ্ করো।

দ্বিতীয় : আল্লাহর কর্তৃত্বের সীমা থেকে বেরিয়ে যাও তারপর যত পার গোনাহ্ কর।

তৃতীয় : এমন স্থানে চলে যাও যেখানে আল্লাহ্ তোমাকে দেখবেন না, অতঃপর যত পার গোনাহ্ কর।

চতুর্থ : যখন মৃত্যুর ফেরেশতা তোমার রুহ্ কবজ করতে আসবে তখন যদি তুমি নিজেকে রক্ষা করতে পার তাহলে যত খুশী গোনাহ কর।

পঞ্চম : যখন আজাবের ফেরেশতা তোমাকে আগুনে নিক্ষেপ করবে তখন যদি তা থেকে বাচঁতে পার তাহলে যত ইচ্ছা পাপ করে যাও।”৪

পাঁচ : ইমাম হোসাইন (আ.) বলেছেন :

يَا اْبْنَ آدَمَ إِنَّمَا أَنْتَ أَيَّامٌ كُلَّمَا مُضِىَ يَوْمٌ ذَهَبَ بَعْضُكَ

অর্থাৎ “হে মানুষ, তোমার পুঁজি তোমার আয়ুষ্কাল। তোমার আয়ু থেকে যতদিন চলে যাচ্ছে ততই তোমার মূলধন সমাপ্তির দিকে ধাবিত হচ্ছে।”৫

ছয় :

قِيْلَ لِلْحُسَيْنِ بْنِ عَلِىٍّ (ع) : كَيْفَ أَصْبَحْتَ يَا اْبْنَ رَسُوْلِ اللهِ؟ قَالَ: أَصْبَحْتُ وَ لِىَ رَبِّى فَوْقِى, وَ اْلْنَّارُ أَمَامِى , وَ اْلْمَوْتُ يَطْلُبُنِى , وَ اْلْحِسَابُ مُحْدِقٌ بِى , وَ أَنَا مُرْتَهِنٌ بِعَمَلِى , لاَ أَجِدُ مَا أُحِبُّ , وَ لاَ أَدْفَعُ مَا أَكْرَهُ , وَاْلأُمُوْرُ بِيَدِ غَيْرِى , فَإِنْ شَآءَ عَذَّبَنِى وَ إِنْ شَآءَ عَفَا عَنِّى , فَأَىُّ فَقِيْرٍ أَفْقَرُ مِنِّى؟

“ইমাম হোসাইন (আ.)-কে প্রশ্ন করা হলো : রাত্রি কেমন কাটালেন? তিনি উত্তরে বললেন : আমি এমন অবস্থায় রাত কাটিয়েছি যখন আমার রব (প্রতিপালক) আমার কাজ-কর্মের উপর সর্বক্ষন নজর রাখছেন, যখন জাহান্নামের আগুন আমাকে ধাওয়া করে চলছে এবং মৃত্যু হাতছানি দিয়ে ডাকছে এবং হিসেব-নিকেশ (পৃথিবীতে এবং কিয়ামতের দিবসের জন্যে) আমাকে ঘিরে রেখেছে আর এভাবে আমি আমার কর্ম অনুযায়ী ফল ভোগ করবো। এরকম টি নয় যে, সব কিছু আমার পছন্দ অনুসারে আমার সামনে আসবে আর যা কিছু অপছন্দ করি তা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারবো। কেননা সকল কিছুর পরিচালনা তার হাতে। তিনি যদি চান আমাকে আযাব দিতে পারেন। আবার যদি চান ক্ষমা করে দিতে পারেন। সুতরাং আমার চেয়ে বড় অভাবী কে হতে পারে?”৬

সাত : ইমাম বলেন :

إِنَّ قَوْمًا عَبَدُوْا اللهَ رَغْبَةً فَتِلْكَ عِبَادَةُ اْلْتُّجَّارِ وَ إِنَّ قَوْمًا عَبَدُوْا اللهَ رَهْبَةً فَتِلْكَ عِبَادَةُ اْلْعَبِيْدِ وَ إِنَّ قَوْمًا عَبَدُوْا اللهَ شُكْرًا فَتِلْكَ عِبَادَةُ اْلأَحْرَارِ وَ هِىَ أَفْضَلُ اْلْعِبَادَةِ

“একদল জান্নাতের লোভে আল্লাহর ইবাদত করে থাকে। তাদের ইবাদত ব্যবসায়িক ইবাদত। অন্য একদল লোক জাহান্নামের ভয়ে ইবাদত করে থাকে। তাদের ইবাদত দাসত্বের ইবাদত। অপর একদল আল্লাহর শোকর আদায়ের লক্ষ্যে ইবাদত করে থাকে। তাদের ইবাদত মুক্ত মানুষের ইবাদত। এটাই সর্বত্তোম ইবাদত।”৭

আট : ইমাম বলেন :

مَا أَخَذَ اللهُ طَاقَةَ أَحَدٍ إِلاَّ وَضَعَ عَنْهُ طَاعَتَهُ , وَ لاَ أَخَذَ قُدْرَتَهُ إِلاَّ وَضَعَ عَنْهُ كُلْفَتَهُ

“যদি আল্লাহ কারো সাধ্যকে সীমিত করেন তবে তাঁর আনুগত্যের সীমাকেও সীমাবদ্ধ করে দেন এবং যদি কারো শক্তিকে হ্রাস করেন তবে তার অবশ্য করণীয় বিষয়সমূহেও বিশেষ ছাড় দেন অর্থাৎ আল্লাহ্ ব্যক্তির সাধ্য অনুযায়ী আনুগত্য নির্ধারণ করেন এবং শক্তি অনুযায়ী দায়িত্ব আরোপ করেন।”৮ অর্থাৎ আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকে তার শক্তি ও সামর্থ অনুযায়ী কর্তব্য দিয়ে থাকেন, সাধ্যের অতীত কোন কিছু কারো উপর চাপিয়ে দেন না। যেমনি করে কুরআনুল কারিমে আল্লাহ্ বলেন :

لاَ يُكَلِّفُ اللهُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا

অর্থাৎ “আল্লাহ্ সাধ্যের অতীত কোন ব্যক্তির উপর দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।”

নয় : ইমাম বলেন :

لَيْسَ لِأَنْفُسِكُمْ ثَمَنٌ إِلاَّ اْلْجَنَّةَ فَلاَ تَبِيْعُوْهَا بِغَيْرِهَا فَإِنَّهُ مَنْ رَضِىَ مِنَ اللهِ بِاْلْدُّنْيَا فَقَدْ رَضِىَ بِاْلْخَسِيْسِ

“জান্নাত ব্যতীত অন্য কিছুতে তোমাদের কোন মূল্য হয় না। সুতরাং জান্নাত ছাড়া অন্য কিছুর বিনিময়ে নিজেকে বিক্রি করো না। যে ব্যক্তি দুনিয়া পেয়েই সন্তুষ্ট হয়ে যায় সে সর্বনিকৃষ্ট জিনিস নিয়েই সন্তুষ্ট হয়।”৯

দশ : ইমাম বলেন :

لاَ يُكْمَلُ اْلْعَقْلُ إِلاَّ بِإِتِّبَاعِ اْلْحَقِّ

“সত্যের অনুসরণ ব্যতীত আকলের (বুদ্ধিবৃত্তি) পরিপূর্ণতা আসে না।”১০

এগার : ইমাম বলেন :

شُكْرُكَ لِنِعْمَةٍ سَالِغَةٍ يَقْتَضِى نِعْمَةً آنِفَةً

“অতীত অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আল্লাহর পক্ষ থেকে নতুন নেয়ামত বয়ে আনে।”১১

বার : ইমাম বলেন :

لاَ تَأْمَنْ إِلاَّ مَنْ خَافَ اللهُ تَعَالَى

“যে ব্যক্তি আল্লাহকে ভয় পায় তাকে ছাড়া অন্য কাউকে বিশ্বাস করো না।”১২

তের :

قِيْلَ لَهُ مَا اْلْفَضْلُ ؟ قَالَ عَلَيْهِ اْلْسَّلاَمُ : مِلْكُ اْلْلِسَانِ وَ بَذْلُ اْلإِحْسَانِ

“ইমামকে প্রশ্ন করা হলো যে মর্যাদা কিসে হয়? তিনি বলেন : “জিহ্বার মালিক হলে (অর্থাৎ যে কথায় আল্লাহ অসন্তুষ্ট হবেন সে কথা থেকে বিরত থাকা) এবং দয়া পরবশ হলে (অর্থাৎ আল্লাহর বান্দাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করলে)।”১৩

 

তথ্যসূত্র :

১। তোহাফুল উকুল, পৃ. ২৪৪।

২। প্রাগুক্ত, পৃ. ২৪৬।

৩। আমালী, সাদুক, পৃ. ১২১।

৪। বিহারুল আনওয়ার, ৭৮, পৃ. ১২৬ (ভাবার্থ তুলে ধরা হয়েছে)।

৫। বালাগাতুল হোসাইন, পৃ. ৮৭। (দইলামীর রচিত ‘ইরশাদুল কুলুব’ থেকে উদ্ধৃত)।

৬। বিহারুল আনওয়ার, ৭৮তম খণ্ড, পৃ. ১১৬।

৭। প্রাগুক্ত, ৭৮তম খণ্ড, পৃ. ১১৭।

৮। প্রাগুক্ত, ৭৮তম খণ্ড, পৃ. ১১৭।

৯। বালাগাতুল হোসাইন, পৃ. ৩০৮ ।

১০। প্রাগুক্ত, পৃ. ৩০৭। বিহারুল আনওয়ার, ১৭তম খণ্ড।

১১। প্রাগুক্ত, পৃ. ২৯৩।

১২। প্রাগুক্ত, পৃ. ২৯২।

১৩। প্রাগুক্ত,পৃ.৩৩২

আল্লাহুম্মা সাল্লে আলা মুহাম্মাদ দিন ওয়া আলে মুহাম্মাদ ওয়া আজ্জিল ফারজাহুম

In addition to creating news on this site, we collect news from various news sites and publish it with relevant sources. Therefore, if you have any objections or complaints about any news, you are requested to contact the authorities of the relevant news site. It is illegal to use news, photographs, audio and video from this site without permission.